বেজে গেছে ক্রিকেট (Cricket) বিশ্বযুদ্ধের দামামা। ভারতের মাটিতে ফের বসতে চলেছে পুরুষদের একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ (Men's Cricket World Cup)। চার-ছয়ের বৃষ্টিতে আগামী একমাস ধরে লড়াই হবে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপার জন্য। আর এবারই প্রথম একদিনের বিশ্বকাপের মঞ্চে থাকছে খোদ ভারতে তৈরি ব্যাট। ১০২ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরের (Kashmir) উইলো কাঠের ব্যাটে (Willow Bat) এবার শক্তিপরীক্ষা হতে চলেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটারদের।
কাশ্মীরের ‘জিআর৮ স্পোর্টস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’-এর হাত ধরে ১৯২০ সাল নাগাদ শুরু সেখানকার ব্যাটশিল্প। তারা আইসিসি-র ছাড়পত্র পাওয়ার পর এবারই প্রথম একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য বহুদিন ধরেই চলে আসছে কাশ্মীরের ব্যাটের বাজার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে খ্যাতি এসেছে অনেক পরে। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দেখা মেলে কাশ্মীরের উইলো ব্যাটের। সব ঠিকঠাক থাকলে হয়তো ভারতের মাটিতেই ‘উদ্বোধন’ হত তার। ২০২০ সালে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু তাকে পিছিয়ে দেওয়া হয় কোভিড অতিমারির কারণে। অন্যদিকে ২০২১-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতে হওয়ার কথা থাকলেও, ফের বাধ সাধে করোনা। অবশেষে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অক্টোবর মাসে শুরু হয় প্রতিযোগিতাটি। সেখানে ওমানের কয়েকজন ক্রিকেটারকে দেখা যায় কাশ্মীরের ব্যাট হাতে মাঠে নামতে।
২০২২-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ক্রিকেটাররাও ব্যবহার করতে শুরু করেন এই ব্যাট। যার মধ্যে ছিলেন জুনেইদ সিদ্দিকি। আর সেখানেই ঘটে যায় এক চমকপ্রদ ঘটনা। গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেলেও তিনি ১০৯ মিটারের একটি ছয় হাঁকান। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রেকর্ড। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক বাজারের নজর এসে পড়ে কাশ্মীরের ব্যাটের উপর। এবছর আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ১৭ জন ক্রিকেটারের সঙ্গী হচ্ছে এই ব্যাট। ফলে বিশ্বকাপের আসরে ব্যাট জোগানের হ্যাটট্রিক করে ফেলল তারা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে আইসিসি-র স্বীকৃতির পর চাহিদা আসছে সারা বিশ্ব থেকে। গত কয়েকমাসে রপ্তানি করা হয়েছে প্রায় দু’লক্ষ ব্যাট।
কিন্তু এত দেরি কেন? ১০২ বছর তো কম কথা নয়। ‘জিআর৮ স্পোর্টস’-এর কর্মকর্তার মতে, তারা পিছিয়ে ছিলেন শিক্ষা আর কারিগরি নৈপুণ্যে। ব্যাট বানানোর শিল্প রপ্ত হলেও, তাকে কীভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করতে হয়, সেই শিক্ষা ছিল না তাদের। আইসিসি-র বিধি সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এগারো বছরের দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে তারা নিপুণ করে তুলেছেন ব্যাটগুলি। এমনিতে উইলো কাঠের ব্যাট অত্যন্ত হালকা। বলের সঙ্গে সংঘর্ষের তীব্রতা অনুভব করা যায় কম, দ্রুত গতিতে বল ছুটে যায় বাউন্ডারির ওপারে। আর তাই এত জনপ্রিয়তা এই ব্যাটের। যদিও ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের মতো ক্রিকেটবিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলি অভ্যস্ত ইংল্যান্ডের উইলো কাঠের ব্যাটে। বহুদিন ধরে দাপট চলছে তাদেরই। ফলে যতদিন না বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের হাতে কাশ্মীরের ব্যাট উঠছে, ততদিন লড়তে হবে কিছুটা পিছনে থেকেই। নিশ্চয়ই এবারের বিশ্বকাপে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে, এমনটাই আশা ব্যাট প্রস্তুতকারকদের।
আরও পড়ুন
আজও সুফিবাদের ঐতিহ্যকে লালন করে চলেছে যে কাশ্মীরি গ্রাম
কাশ্মীরের ব্যাট প্রস্তুতের ব্যবসার সঙ্গে এই মুহূর্তে জড়িয়ে অন্তত দেড় লক্ষ লোক। কোভিডের সময় বিরাট ধাক্কা খেয়েছিলেন তারা। কিন্তু ২০২১-এর বিশ্বকাপের মঞ্চে আত্মপ্রকাশ হতেই আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে সবকিছু। এবার শুরু নতুন যাত্রাপথ। ভারতের মাটিতে শোনা যাবে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ব্যাটের গর্জন। বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে পড়া প্রতিটি বলে লেগে থাকবে ভূস্বর্গের স্পর্শ।
আরও পড়ুন
কাশ্মীরে বিপন্নপ্রায় ফার্সি, সংরক্ষণের হাতিয়ার কবির পাণ্ডুলিপি
Powered by Froala Editor