বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতে। এবার সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরাও। একুশ শতকের শেষে জম্মু-কাশ্মীরসহ লাদাখে তাপমাত্রা যার জেরে বেড়ে যেতে পারো ৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি। আবহাওয়া বদলের জন্য গলে যেতে পারে হিমালয়ের ৮৫ শতাংশ হিমবাহ, রয়েছে সেই আশঙ্কাও।
সম্প্রতি এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় গত ২৯ জুলাই। কাশ্মীর এবং লাদাখে বিশ্বউষ্ণায়নের প্রভাবের ভিত্তিতে মোট ১১টি মডেল তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউনভার্সসিটি অফ কাশ্মীরের বেশ কয়েকজন গবেষক। জম্মু, কাশ্মীর, লাদাখ, গিলগিট, বালিস্তান, আকসাই চিন এবং লাইন অফ কন্ট্রোল অঞ্চলের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। তাঁর ভিত্তিতেই প্রস্তুত করেন এই মডেলগুলি।
তিনটি ভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের উত্তরের এই অঞ্চলগুলির তাপমাত্রা বাড়তে পারে তিনরকম। যথাক্রমে ৪.৫, ৩.৯৮ এবং ৬.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং বলাই বাহুল্য এই অনুমেয় তাপমাত্রা নির্ভর করছে গ্রিন হাউস গ্যাসের আধিক্যের ওপরে। আনুমানিক গড়ের থেকেও যদি বাড়তে থাকে ভবিষ্যৎ কার্বন নির্গমন তবে কাশ্মীরের তাপমাত্রা বাড়বে ৬.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পাশাপাশি এই গবেষণা জানাচ্ছে, বর্তমানে যে হারে এগিয়ে চলেছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং তাতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২১ শতাব্দীর শেষে গিয়ে দাঁড়াবে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে। ভারতের গড় তাপমাত্রা বাড়বে ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি কার্বন নির্গমন না কমিয়ে আনা যায়, তবে হিমালয় অঞ্চলের ৮৫ শতাংশ হিমবাহই গলে যাবে, জানাচ্ছেন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানের এক গবেষক। অন্যদিকে উষ্ণতা বাড়ার কারণে ছোট হয়ে আসবে লাদাখের শীতল মরুভূমি। আয়তন কমে টিকে থাকবে মাত্র ২২ শতাংশ। বাড়বে উষ্ণ বলয়ের ক্ষেত্র।
আরও পড়ুন
সাদা বরফের ওপর ছড়িয়ে গোলাপি আভা, ইতালির হিমবাহের অবস্থায় চিন্তিত বিজ্ঞানীরা
গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ কার্বন ফুটপ্রিন্ট। যা সরাসরি নির্ভর করে জীবাশ্ম জ্বালানির জ্বলন, বায়ুদূষণ, বৃক্ষচ্ছেদন, শিল্পায়নের ওপরে। তবে কাশ্মীর শিল্পাঞ্চল না হলেও সারা বিশ্বের দূষণের প্রভাব এসে পড়ছে ভারতের শীতলতম এই অঞ্চলেও। উষ্ণায়ন বেশ বড়-সড় প্রভাব ফেলতে চলেছে মানুষের জনজীবন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য এবং এমনকি চাষাবাদেও।
আরও পড়ুন
ব্ল্যাক কার্বনের পরিমাণ বেড়েছে ৪০০ গুণ, সংকটে গঙ্গোত্রী-সহ হিমালয়ের হিমবাহ
হিমালয়ের ৮৫ শতাংশ হিমবাহ গলে গেলে তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। ভারতের একটা বড় অংশই নির্ভর করে হিমালয়ের থেকে তৈরি হওয়া নদীগুলির ওপরে। বরফ গলে গেলে বন্ধ হবে জলবিদ্যুতের উৎপাদন। প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও। বরফ গলে যাওয়ায় এবং তুষারপাতও অনেক কমে আসার ফলে উত্তর ভারতের পর্যটন শিল্পে আঘাত আসবে। জলসঙ্কট নেবে ভয়ঙ্কর চেহারা। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের কাছে লক্ষ্য হওয়া উচিত কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার প্রকল্প গ্রহণ করা। নাহলে ভুগতে হবে সারা বিশ্বকেই, সাবধান করছে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন গবেষণা...
আরও পড়ুন
দৈত্যাকার হিমবাহের ভাঙন অ্যান্টার্কটিকায়, আয়তনে কলকাতার প্রায় দেড়গুণ
Powered by Froala Editor