বছরের বাকি দিনগুলিতে গ্রামটির চেহারা পুরো অন্যরকম। সম্পূর্ণ হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রাম। একটিও মুসলমান পরিবারের বাস নেই সেখানে। অতএব কোনো ভোরেই যে আজানের সুর শোনা যায় না, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু মহরমের দিন দৃশ্যটা যেন হঠাৎ বদলে যায়। সমস্ত গ্রামবাসীরা মিলে জড়ো হন ফকিরের দরগায়। তারপর সারাদিন ধরে চলে অনুষ্ঠান। অবশ্য তাকে পূজা-পাঠ বলাই ঠিক হবে। ইসলামিক রীতিনীতির সঙ্গে সেভাবে পরিচয় না থাকায় মহরমের অনুষ্ঠানেও মিশে গিয়েছে হিন্দু রেওয়াজ।
কর্নাটকের সৌদাত্তি তালুকের মধ্যে রয়েছে হরলাপুর গ্রাম। আর এই গ্রামের সবচেয়ে বড়ো উৎসব মহরম। যদিও একটিও মুসলমান পরিবারের বাস নেই সেখানে। হিন্দু জনগনণ মেতে ওঠেন অনুষ্ঠানে। উৎসবের আনন্দের সঙ্গে মিশে থাকে নিখাদ ভক্তিও। অবশ্য এই প্রথা খুব বেশিদিনের পুরনো নয়। মাত্র ১১ বছর আগে গ্রামের বাসিন্দারাই চাঁদা তুলে তৈরি করেছেন ফকির স্বামীর দরগা। সেই থেকেই চলে আসছে অনুষ্ঠান। তবে ৫০ বছর আগেও গ্রামের কিছু পরিবার পুরনো দরগায় সিন্নি চড়াত বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
এই ফকির স্বামীর দরগার কাছেই রয়েছে একটি প্রাচীন নিম গাছ। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এই নিমগাছ সাপের কামড়ের অব্যর্থ ওষুধ। এমনকি নিয়মিত এই নিমগাছের পাতার রস সেবন করলে সাপ কামড়াতেও সাহস পায় না। এই সবই অবশ্য মানুষের অন্ধ বিশ্বাস। কিন্তু এই বিশ্বাসের সুতোতেই বাঁধা পড়ে গিয়েছে দুই ধর্ম। ফুটে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক আদর্শ চেহারা। আশেপাশের গ্রাম থেকেও মহরমের দিন এখানে ভিড় জমায় মানুষ। বেশ কিছু হিন্দু মন্দির থেকেও আসেন ভক্তরা। আর ব্রাহ্মণ পুরোহিতের হাতে পুজো পান ‘আল্লাহ’। এবছর গ্রামবাসীরা সেই ‘আল্লাহ’-র কাছে আবেদন রেখেছেন করোনা অতিমারীর হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য। আল্লাহ সেই কথা শুনবেন কি? অবশ্য সাম্প্রদায়িক হানাহানির অসুখ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে এই যৌথতার সংস্কৃতিই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রক্ত ঝরানো নয়, বরং রক্তদানেই মহরমের সার্থকতা খুঁজলেন জব্বলপুরের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা