বছর খানেক আগেই দেশজুড়ে নিষিদ্ধ হয়েছে প্লাস্টিক ব্যাগ। কিন্তু সমীক্ষা বলছে অন্য কথা। সরকারের এই পদক্ষেপের পরেও খোলা বাজারে দেদার চলছে প্লাস্টিকের ব্যাগ। প্রশ্ন থেকে যায়, তবে কি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না বিন্দুমাত্র? না, ব্যাপারটা তেমন নয় একেবারেই। আসলে প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প হিসাবে বাজারে যে-সব কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ প্রচলিত— অধিকাংশক্ষেত্রেই তাদের ভারবহন ক্ষমতা প্লাস্টিকের থেকে কম। পাশাপাশি তা জল-রোধী না-হওয়ায় মাছ-মাংস কিংবা খাদ্যদ্রব্য পরিবহনের সময় ভিজে গিয়ে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। আর উপযুক্ত বিকল্পের এই অভাবের কারণেই প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না সম্পূর্ণভাবে।
এবার এই সমস্যারই অভিনব সমাধান খুঁজে বার করলেন কর্ণাটকের কারওয়ারের বাসিন্দা ধনঞ্জয় হেগড়ে (Dhananjaya Hegde)। বানিয়ে ফেললেন কাগজের তৈরি এমন এক ব্যাগ যা একইসঙ্গে জল-রোধী ও টেকসই। সবমিলিয়ে ১০ কিলোগ্রাম ভার বহন করতে সক্ষম কর্ণাটকের অবসরপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদের তৈরি এই বিশেষ কাগজের ব্যাগ।
বছর কয়েক আগের কথা। খবরের কাগজের মাধ্যমে কীভাবে ব্যাগ তৈরি করা যায়— তা নিয়েই নানাধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছিলেন ধনঞ্জয়। প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল, এই ব্যাগকে জল-নিরোধক করে তোলা। এক্ষেত্রে ভুট্টা থেকে তৈরি রেজিনই হাতিয়ার হয়ে ওঠে তাঁর। ধনঞ্জয়ের কথায়, কাঠের নৌকাকে জলরোধী করে তুলতে রেজিন ব্যবহৃত হয় সাধারণত। আর সেই একই প্রক্রিয়া তিনি কাজে লাগিয়েছেন এই ব্যাগ তৈরির ক্ষেত্রে। তবে প্রক্রিয়াটিকে সাশ্রয়ী করে তুলতে বাজার চলতি রেজিনের বদলে তিনি ব্যবহার করেন ভুট্টার রেজিন। খবরের কাগজের ওপর কর্ন রেজিনের প্রলেপ একদিকে যেমন এই ব্যাগের জল শোষণের ক্ষমতাকে প্রতিহত করে, তেমনই তাতে পুরু হয়ে ওঠে কাগজের ব্যাগ। বাড়ে দৃঢ়তা। অন্যদিকে খবরের কাগজের কালিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থকে খাদ্যদ্রব্যের সংস্পর্শে আসা থেকেও প্রতিহত করে রেজিনের এই প্রলেপ।
তবে উদ্ভাবনই শেষ কথা নয়। এই পণ্যের গণ-উৎপাদন না হলে যে কোনোভাবেই প্রতিহত করা যাবে না প্লাস্টিকের ব্যবহারকে। সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন তাঁরই এক সহকর্মী দত্তত্রেয় ভট্ট। পেশায় তিনিও প্রযুক্তিবিদ। কাগজের ব্যাগের গণ-উৎপাদনের জন্য বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেন তিনি, যা ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে কর্ণাটকের একাধিক জায়গায়। মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা।
অঙ্কটা কম নয় মোটেই। তবে এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিটি কাগজের ব্যাগ তৈরির ক্ষেত্রে যা খরচ হয়, তা প্লাস্টিক ব্যাগের উৎপাদন মূল্যের থেকে অনেকটাই কম। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। কর্ণাটকের বেশ কিছু অঞ্চলে ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে প্রচলিত হয়েছে কাগজের তৈরি এই ব্যাগ। বিকোচ্ছে ৫-১০ টাকা দরে। বলার অপেক্ষা থাকে না, আগামীদিনে দেশের পরিবেশ বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা নেবে দক্ষিণ ভারতের প্রযুক্তিবিদের এই উদ্ভাবন…
Powered by Froala Editor