দেশের দ্বিতীয় রূপান্তরকামী হিসাবে পদ্মশ্রী পেলেন কর্ণাটকের যোগাপ্পা নৃত্যশিল্পী

লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে মঞ্চের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন এক ভদ্রমহিলা। তাঁর হাতে পদ্ম পুরস্কারের স্মারক তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। কিন্তু মঞ্চে ওঠার আগেই হলের আমেজ বদলে দিলেন তিনি। প্রথমেই প্রণাম করলেন মঞ্চকে। তারপর স্বকীয় ভঙ্গিতে শাড়ির আঁচল দিয়ে খোদ রাষ্ট্রপতিকে ৩ বার বরণ করে তারপর পা দিলেন মঞ্চে। 

মাতা বি মানজাম্মা (Matha B Manjamma)। কর্ণাটকের এই যোগাপ্পা লোকনৃত্য শিল্পী এভাবেই নজর কাড়লেন পদ্ম পুরস্কার বিতরণী সভায়। তাঁর কর্মকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতিও। এবারের পদ্ম পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় যেখানে বলিউডি তারকাদের ছড়াছড়ি, সেখানে দাঁড়িয়ে সমাজের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াকু মানুষদের অন্যতম প্রতিনিধি মানজাম্মা। চলতি বছরের একমাত্র রূপান্তরকামী ব্যক্তিত্ব হিসাবে পদ্মশ্রী পুরস্কার (Padma Shri) পাওয়া মানজাম্মা এখন হাজার হাজার তরুণ তরুণীর অনুপ্রেরণা। 

মানজাম্মার এই লড়াই শুরু হয়েছিল আঠারোর গণ্ডি পেরনোর আগে থেকেই। কর্ণাটকের বল্লারি জেলায় জন্ম মাতা মানজাম্মার। ১৬ বছর বয়সে প্রথম তিনি উপলব্ধ করেন, খাতায়-কলমে পুরুষ হলেও তাঁর যৌন পরিচয় ভিন্ন। না, তাঁর সেই পরিচয়কে আমল দেয়নি পরিবার। বরং, সমাজের চাপে বাড়ি ছাড়তে হয় তাঁকে। ভিক্ষাবৃত্তি করেই সেসময় দিন কাটত তাঁর। এমনকি পারিপার্শ্বিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলেন মানজাম্মা। না, প্রাণ যায়নি। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হয়নি আর। 

দুঃসময় পিছু ছাড়েনি তারপরেও। সেসময় রাস্তায় খোলা আকাশের নিচেই দিন কাটত তাঁর। দু’বেলা খাবারও জুটত না নিয়মিত। এরই মধ্যে আরও একটি ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন মানজাম্মা। গণধর্ষণ। সেবারেও নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাই ভেবেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রাণ বাঁচান কর্ণাটকের ট্রান্সজেন্ডার এবং হিজরা সংগঠন ‘যোগাপ্পা’-এর কয়েকজন সদস্য। তাঁদের সৌজন্যেই নৃত্যশিল্পী বাসাপ্পার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। বদলে যায় মানজাম্মার জীবন। বাসাপ্পার হাত ধরেই যোগতি বা যোগাপ্পা লোকনৃত্যের জগতে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। 

আরও পড়ুন
কবর থেকে ফিরে এসে পদ্মশ্রী, গুলাবু সাপেরার কাহিনি হার মানায় সিনেমাকেও

এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় হাজারটিরও বেশি মঞ্চে প্রদর্শনী করেছেন মানজাম্মা। তাঁর দৌলতেই বিশেষ এই নৃত্যকলা জনপ্রিয়তা পেয়েছে কর্ণাটকে। বর্তমানে যোগতি নৃত্য গোষ্ঠীর অন্যতম পরামর্শদাতাও তিনি। সেইসঙ্গে ২০১৯ সাল থেকে সামলাচ্ছেন কর্ণাটকের জনপদ অ্যাকাডেমির সভাপতির দায়িত্বও। ২০১০ সালে কর্ণাটক সরকারের থেকে রাজ্যোৎসব সম্মাননা পান মানজাম্মা। এবার ভারতের দ্বিতীয় রূপান্তরকামী হিসাবে পেলেন চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী। মানজাম্মার এই কৃতিত্ব যেন প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌনতার সমস্ত মানুষদের লড়াইয়ের পক্ষে জয়…

আরও পড়ুন
৩০ বছর ধরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা, পদ্মশ্রী পেলেন ডাঃ কৃষ্ণমোহন পাথি

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৭০ বছর ধরে গ্রামের দরিদ্রদের শিক্ষাদান, পদ্মশ্রী পেলেন শতায়ু নন্দ প্রুস্তি