বহুদিন আগেই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তার। তবে বিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি সেই প্রজাতিকে। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সংরক্ষিত নমুনার বিশ্লেষণের মাধ্যমেই নতুন প্রজাতির সাপ আবিষ্কার করলেন কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষক।
২০০৬ কি ২০০৭ সাল। ফিলিপাইনের সামার এবং লেইটে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণার জন্য একটি অভিযান চালিয়েছিলেন কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োডাইভার্সিটি ইনস্টিটিউট এবং ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষকরা। আর সেই অভিযানেই তাঁরা খুঁজে পেয়েছিলেন এক অদ্ভুত সাপ। যা এতদিন সংরক্ষিত ছিল সেই মিউজিয়ামেই। ২০১৪ সালে এই প্রজাতির আরও বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে সম্পূর্ণ গবেষকরা ভেবেছিলেন এই প্রজাতি হয়তো পূর্ব আবিষ্কৃত। কাজেই সংরক্ষিত নমুনাগুলি অপরীক্ষিত অবস্থায় এতদিন পড়েছিল অবহেলায়।
গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট জেফ উইনেল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত নমুনাগুলি নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই শুরু করেছিলেন পড়াশোনা। তবে উল্লেখিত নমুনাটিই ভাবিয়ে তোলে তাঁকে। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পরেও এই ধরণের কোনো সাপের প্রজাতির অস্তিত্বের কথা কোনো গবেষণাপত্রেই খুঁজে পান না তিনি। ফলত নমুনার ডিএনএ এবং কোষের বিশ্লেষণ করে তিনি সিটি স্ক্যানের জন্য পাঠান ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর সেই পরীক্ষার ফলাফলেই চমকে ওঠেন তিনি। না, পূর্ব-আবিষ্কৃত নয়, বরং একেবারে নতুন প্রজাতির এই সাপ। আরও ভালো করে বলতে গেলে, শুধু নতুন প্রজাতিই নয়, নতুন গোত্রেরও।
ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের সর্পবিশেষজ্ঞ অ্যালান লেভিটনের নামানুসারে এই বিশেষ প্রজাতির সাপের নামকরণ করা হয়েছে লেভিটনিয়াস মিরাস। গবেষক জেফ উইনেল জানান, বিশেষ এই সাপের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে আত্মরক্ষার জন্য এক বিশেষ কৌশল। মূলত মাটির তলাতেই বসবাস করে এই প্রজাতি। বৃষ্টির পর ভিজে মাটির ভেতর থেকে অনেকটা কেঁচোর মতোই মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসে তারা। তবে তা স্বল্পক্ষণের জন্যই। সম্প্রতি এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে কোপিয়া বিজ্ঞান পত্রিকায়।
তবে আত্মরক্ষার এই অভ্যেসই তাদের কাছে বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ক্রমবর্ধমান কৃষিজমির বৃদ্ধি এবং মানুষের বসতি নির্মাণের কারণে দ্রুত কমছে এই সাপেরদের বাসস্থান। কংক্রিটের আস্তরণে চাপা পড়ে যাচ্ছে মাটি। ফলে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে তাদের জনসংখ্যা নিয়ে। এখনও পর্যন্ত সমস্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান হাতে না পাওয়া সত্ত্বেও আবিষ্কারক জেফ উইনেলের ধারণা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকাতেই জায়গা নেবে এই নতুন প্রজাতি। ফিলিপাইনে যেমন ঈগল কিংবা টার্সিয়ারের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তেমনই যেন এই সাপেদের জন্য পদক্ষেপ নেয় ফিলিপাইন প্রশাসন, সেই দাবিই জানাচ্ছেন তিনি...
Powered by Froala Editor