৬ ভাই ও দুটি পোষা সিংহ – স্তব্ধ করে রেখেছিল লিবিয়ার একটি গ্রামের জনজীবন

পৃথিবী থেকে রাজতন্ত্র বিদায় নিয়েছে বহুদিন। তবু আজও কোথাও কোথাও চোখে পড়ে ছোটো ছোটো রাজাদের রাজত্ব। এই ঘটনা তেমনই এক রাজ পরিবারকে ঘিরে। নিজেদের সামরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি গ্রামকে রীতিমতো কব্জা করেছিল ৬ ভাই। তাদের বিরুদ্ধে কারোর প্রতিবাদের কোনো মুখ ছিল না। কীসের এত আতঙ্ক? আতঙ্ক মৃত্যুর। প্রতিবাদের একমাত্র শাস্তি ছিল মৃত্যু। আর সেই মৃত্যুও অত্যন্ত নিষ্ঠুর। জ্যান্ত মানুষদের ছেড়ে দেওয়া হত পোষা সিংহের সামনে। বাকি কাজটা করত সেই সিংহই।

না কোনো পুরনো কাহিনি নয়, নয় কাল্পনিক কোনো গল্পও। এই একুশ শতকেই এমন অমানবিক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছিলেন লিবিয়ার কুখ্যাত ‘কানি ব্রাদার্স’। ২০১১ সালের লিবিয়া গৃহযুদ্ধের সময় থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত একতরফা চলেছে এই আগ্রাসন। এর মধ্যে নানা সরকার বদল হলেও কানি ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে কেউই কোনো কথা বলেননি। লিবিয়ার রাজধানী ট্রিপলির কাছে ছোট্ট গ্রাম তারহুনা। গৃহযুদ্ধের সময়েও গদ্দাফি সরকারের পক্ষে ছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। আর সেইসময়েই বিপ্লবী সংগঠনের প্রতিনিধি হিসাবে সেখানে আসেন ৭ ভাই। অবশ্য বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ যে আদর্শগত কারণে নয়, সেটা বোঝা গিয়েছিল কিছুদিনের মধ্যেই।

তারহুনার সাধারণ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করতে শুরু করে কানি ব্রাদার্স। আব্দুল খালিক, মহম্মদ, মুয়াম্মার, আব্দুল রহিম, মহসিন, আব্দুল আদিম এবং আলি। ৭ ভাইয়ের দৌরাত্ম্যে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন মানুষ। মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁরা ছোটোভাই আলিকে মেরে ফেলেন। সেটা ২০১২ সাল। আর এরপরেই উৎপীড়ন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। চাষের ক্ষেতের পাশে লাল-সাদা দাগ দিয়ে চিহ্নিত জায়গায় তৈরি করা হল গণ-সমাধিক্ষেত্র। এমনকি হাসপাতাল থেকে মুমুর্ষু মানুষকে তুলে এনেও কবর দেওয়া হয়েছে সেখানে।

এর মধ্যে নানা সময় দল বদলেছে কানি ব্রাদার্স। পরপর সামরিক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুই ভাই। কিন্তু বাকি চার ভাই ও দুটি সিংহের ভয়ে সবসময় তটস্থ হয়ে থাকতেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করল গতবছর গ্রীষ্মকালে। ঠিক এই সময় করোনা অতিমারীর কারণে শহরের কারখানা থেকে গ্রামে ফিরে আসেন বহু মানুষ। আর গ্রামে যখন থাকতেই হবে, তখন শেষ চেষ্টা করে দেখতেই হবে। সমস্ত মানুষের সেই মিলিত প্রতিরোধের সামনে অবশেষে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হল কানি ব্রাদার্স। সেই থেকে এখনও চলছে সমাধিস্থ মানুষদের উপযুক্ত সৎকারের ব্যবস্থা। না, এখনও সরকারের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মানুষ মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছেন নিজেদের তাগিদেই।

Powered by Froala Editor