আইফেল টাওয়ার নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে কল্কি কেঁকলার পূর্বপুরুষ!

১৮৭৭ সাল। সদ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ফরাসি রেল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেছেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই কোম্পানির মাইল গুস্তাব আইফেলের থেকে তার কাছে এল এক ঐতিহাসিক প্রস্তাব। প্যারিসে নাকি নির্মিত হবে বিশ্বের সর্বোচ্চ মনুষ্যসৃষ্ট স্তম্ভ। সেই স্তম্ভের প্রথম নীল-নকশা তৈরি হল তাঁর হাতেই। মরিস কেঁকলা। তবে তিনি একা নন, পরবর্তীতে ফ্রেডরিক অগাস্টে বারথোলডির সঙ্গে জুটি বেঁধেই সেই স্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ করেছিলেন তিনি। আর সেই স্তম্ভ? তা আজ পরিচিত আইফেল টাওয়ার নামে।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, কিংবদন্তি এই ফরাসি প্রযুক্তিবিদ ও স্থপতির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে ভারতেরও। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলিউডের। তিনি আর কেউ নন, অভিনেত্রী কল্কি কেঁকলার প্রপিতামহ। ১৮৫৬ সালে মরিসের জন্ম উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের বাল শহরে। কেঁকলা পরিবার তখন ফ্রান্সের অন্যতম প্রভাবশালী এক পরিবার। মরিসের বাবা জিন কেঁকলা ছিলেন ফ্রান্সের অন্যতম উদ্যোগপতি। কিন্তু ব্যবসায় কোনো আগ্রহ ছিল না তাঁর। ফলত, পারিবারিক বাণিজ্যের রীতি ভেঙে প্রযুক্তিবিদ্যার পথে হেঁটেছিলেন তিনি। 

তবে শুধু আইফেল টাওয়ারই নয়। একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে মরিস কেঁকলার নাম। ফ্রান্সের গ্যারাবিক্ট ভায়াডাক্ট রেলব্রিজ তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তৈরি করেছিলেন স্ট্যাচু অফ লিবার্টিও। যদিও এই নির্মাণের নকশা বানিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রেডরিক বারথোলডি। মরিস সেই নকসা অনুযায়ীই রূপদান করেন ঐতিহাসিক স্থাপত্যটির। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি উপহার দেয় ফরাসি সরকার। কিন্তু এই মাপের একটি স্ট্যাচু স্থানান্তরিত করাও যে মুখের কথা নয়! সেই সমস্যারও সমাধান দিয়েছিলেন মরিস। গুস্তাভ আইফেলের মৃত্যুর পর তাঁর রেলওয়ে সংস্থা ‘চেমিন দে ফার্দে ইস্ট’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টরও হন মরিস। 

আরও পড়ুন
নের্ভাল থেকে ভায়েহো, অসুখ আর প্যারিস যেন সমার্থক

আরও পড়ুন
আইফেল টাওয়ার পছন্দ নয়, প্যারিস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মঁপাসা

যদিও প্রপিতামহকে দেখার সুযোগ পাননি বলিউড অভিনেত্রী। তাঁর জন্মের বহু আগে, ১৯৪৬ সালেই মারা যান মরিস। মরিসের নাতি জোয়েল কেঁকলা পরবর্তীকালে ঋষি অরিবিন্দের মতাদর্শে আকৃষ্ট হয়ে চলে আসেন ভারতে। ছিলেন একজন প্রযুক্তিবিদ। তামিলনাড়ুতে আল্ট্রালাইট এয়ারক্রাফট ও হ্যান্ডগ্লিডারের কোম্পানি স্থাপন করেন তিনি। তাঁরই কন্যাসন্তান কল্কি। 

কল্কির জন্ম ও বড়ো হয়ে ওঠা অরভিলাতেই। সে কারণেই ইংরাজি ও ফ্রেঞ্চের পাশাপাশি হিন্দি ও তামিল উচ্চারণও তাঁর ঝরঝরে। তবে পারিবারিক ঐতিহ্য ভেঙে তিনি প্রযুক্তিবিদ্যার বদলে বেছে নিয়েছিলেন অভিনয়কেই। লন্ডনে থেকেই পড়াশোনা করেন থিয়েটার সম্পর্কে। ভারতে ফিরে মুম্বাইয়ের একটি থিয়েটার কোম্পানিতে তাঁর হাতেখড়ি হয় অভিনয়ের। সেখান থেকেই বলিউড। তারপর ‘শয়তান’, ‘মার্গারিটা উইথ আ স্ট্র’, ‘রিবন’-এর মতো একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন ‘মেড ইন হেভেন’, ‘গালি বয়’, ‘সেক্রেড গেমস’-এর মতো ওয়েব সিরিজেও। নিজের মতো করেই তৈরি করে নিয়েছেন এক অন্য জগৎ। তবে শিকড়কে কি ভুলে থাকা যায়? একাধিকবারই কল্কি কথায় উঠে এসেছে তাঁর পারিবারিক ইতিহাসের গল্প…

Powered by Froala Editor

More From Author See More