ঈদের সেমাই, রথের পাঁপড় ভাগ করে নেওয়ার মতোই এ-যেন চরম বিদ্বেষের সময়ে এক ঐক্যের মন্ত্রপাঠ। কালাপাহাড়ের ভয় দেখিয়ে আগেকার দিনে অনেক মা-ই ঘুম পাড়াতেন তাঁর সন্তানকে। সেই কালাপাহাড়ের প্রভাব যায়নি এখনও। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এখনও অন্য রূপে দেখা যায় কালাপাহাড়দের। জনশ্রুতি, কালাপাহাড়ের কালো ছায়া যেন মনোহলি গ্রামে না পড়ে, সেই চেষ্টা চলেছিল মধ্যযুগ থেকেই। তারই ধারা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে মনোহলি গ্রামের কালীপুজো। কালীপুজোর দিন এখানকার সমস্ত হিন্দু, মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ এক হয়ে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
মুসলমানরা নামাজ পড়ে মাজারে শিরনি দেওয়ার পর অমাবস্যার রাতে শুরু হয় হিন্দুদের শ্যামা ও নিদয়া কালীর পুজো। বহুদিন ধরেই এই নিয়মই চলে এসেছে, আজও। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মনোহলি গ্রামে শ্যামা ও নিদয়া মন্দির চত্ত্বরেই রয়েছে মুসলমানদের মাদার মাজার। প্রসঙ্গত, শ্যামা ও নিদয়াকে এখানে দুই বোনের মতো পুজো করা হয়। বড়ো বোন শ্যামা, ছোট নিদয়া। দুই বোনের জন্যই আলাদা আলাদা মন্দির। সারারাত দীপাবলির অমাবস্যাতে পুজো হওয়ার পর সকালে হয় বিসর্জন। প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়, এমনকি আশেপাশের গ্রাম থেকেও অনেক লোক আসে। মানত হিসেবে পায়রা বলি, পাঁঠাবলিও হয়। এই গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তির কথায়, তিনিও ছোটবেলায় বাবা ঠাকুরদার মুখে কালাপাহাড়ের গল্প শুনেছেন, শুনেছেন সেই সময় থেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুই ধর্মের এক সুতোয় বাঁধনের গল্প। সেই গ্রামের মাজারের এক সেবাইতও জানান, বহুবছর ধরে নামাজের পর পুজো চলে আসছে। তাঁদের অনুষ্ঠানেও হিন্দুরা সর্বতোভাবে সাহায্য করে আসছেন।
এমন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সর্বত্র বজায় থাকলে এতটা কঠিন সময় পেরোতে হত কি দেশকে?