গুলিতে নিহত শতাধিক, পার্টিতে মত্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রনেতা!

গত শনিবারের কথা। মায়ানমারে একই দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর এলোপাথাড়ি গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল ১১৪টি দেহ। রক্তস্নাত হয়েছিল মায়ানমার। সেখানেই থেমে থাকল না হিংস্রতা। চলতি সপ্তাহে গত দু’দিনের মধ্যে বার্মার সেনাবাহিনী হত্যা করল আরও শতাধিক নাগরিককে। আর এই হত্যালীলার মাঝেই অন্যদিকে উদ্দাম ‘পার্টি’-তে মত্ত রাষ্ট্রনেতা। এই ঘটনাই যেন একনায়কতন্ত্রের বর্বরতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

দিনটা ছিল ২৭ মার্চ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জাপানের বাহিনীর বিরুদ্ধে জয় এনেছিল মায়ানমার। পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। আর সেই ঘটনা স্মরণ করেই দিনটাকে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসাবে পালন করে আসা হয় মায়ানমারে। গত শনিবার একদিকে যখন গণহত্যা দেখছে মায়ানমারের রাজপথ, ঠিক সেইসময়েই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশের সেনাদের সঙ্গে মায়ানমারে আয়োজিত হয়েছিল কুচকাওয়াজ। যাতে অংশ নিয়েছিল ভারত-সহ আরও আটটি দেশ।

তবে এত এত মানুষের মৃত্যু সামান্যতম অনুশোচনাও তৈরি করল না জুন্টা তথা বর্তমান দেশপ্রধান মিন হ্লেইংয়ের মনে। শনিবার রাতে এবং রবিবার আয়োজিত হল বিশেষ ডিনার পার্টি। এলাহি বন্দোবস্ত। আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন অতিথি। বো-টাই, সাদা মেডেলওয়ালা জ্যাকেট পরেই লাল গালিচায় হাঁটলেন হ্লেইং। বর্ণময় পদ সাজানো প্লেটের সামনেও দেখা গেল তাঁকে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সামনে এসেছে এমনই বিলাসিতার দৃশ্য।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দু’দিনেও মায়ানমারের ছবি বদলায়নি এতটুকু। গুলি তো চললই, সেইসঙ্গে ব্যবহৃত হল গ্রেনেডও। লক্ষ্য দেশের নাগরিক। এখানেই শেষ নয়, সঙ্গে বিমানহানাও। রবিবার দক্ষিণ-পূর্ব মায়ানমারের ক্যারেন রাজ্য থেকে থাইল্যান্ডে পালানোর চেষ্টা করেন কয়েক হাজার মানুষ। অনেকে সফল হয়েছেন। জায়গা পেয়েছেন থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরে। তবে অনেকের আর সেই সৌভাগ্য হল না। তার আগেই বোমারু বিমানের হামলায় নিথর হয়ে গেল দেহ। বিগত দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম মায়ানমারে ব্যবহৃত হল যুদ্ধবিমান। অন্যদিকে সীমান্তে ধরে পড়ে যাওয়া বেশ কয়েকজনকে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করেও ‘মৃত্যুদণ্ড’ দিয়েছে সেনারা। বাকিরা গা ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে রয়েছেন ঘন জঙ্গলে। সব মিলিয়ে মায়ানমারে বর্তমানে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০০। 

আরও পড়ুন
বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, বিচ্ছিন্ন মায়ানমারের আন্দোলনকারীরা

শুধু যে প্রতিবাদীদেরই শিরদাঁড়া গুঁড়িয়ে দিচ্ছে মায়ানমার প্রশাসন, তেমনটা নয়। এই অঘোষিত ইমার্জেন্সিতে একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে নাবালক-নাবালিকাদের। এখনও পর্যন্ত শিশু-কিশোর হত্যার সংখ্যা ৩৫ ছাড়িয়েছে সে-দেশে। একে নিষ্ঠুরতার চরমতম উদাহরণ বললেও কম হয়ে যায় হয়তো।

যেখানে সেনাবাহিনীর মূল কাজই হল দেশবাসীকে সুরক্ষা প্রদান করা, সেখানে তাঁরাই হয়ে উঠেছেন জল্লাদ। জুন্টার এই বর্বরতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই গর্জে উঠেছে একাধিক রাষ্ট্র। সম্প্রতি ঘটনার প্রতিবাদে মায়ানমারের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্কে ইতি টেনেছেন বাইডেন। তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচলেট লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যেন সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয় সমস্ত রাষ্ট্রই। প্রস্তাবিত হয়েছে জ্বালানি এবং সামরিক অস্ত্রের সরবরাহও বন্ধ করার কথা। এখন সেই প্রস্তাবই কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই দেখার। ততদিনে মৃতের সংখ্যা যে আকাশ ছোঁবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

আরও পড়ুন
ভারতে আশ্রয় নিলেন মায়ানমারের পুলিশ আধিকারিকরা

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More