পরিবারের কথা বিশেষ মনে পড়ে না। মনে পড়ে শুধু মায়ের লম্বা কালো চুল ছিল। বাবা ছিল কালা-বোবা। দাদা-দিদি ছিল। তারপর কী হল মনে নেই। ৪-৫ বছর বয়স থেকেই দিন কেটেছে চেন্নাইয়ের রাস্তায়। কখনো খাদ্যের সারিতে প্রতীক্ষায়। কখনও আবার মারামারি করে। আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া খাবারও মুখে তুলে নিয়েছেন অনায়াসে। আর সেই মানুষটিই এখন টরন্টো শহরে এক বিশাল রেস্টুরেন্টের মালিক। শুধু তাই নয়, তাঁর কেরিয়ার শুরু নর্থ ৪৪ নামের এক পাঁচতারা হোটেল থেকে। স্যাস সিম্পসনের জীবন সত্যিই রোমাঞ্চকর।
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে রাস্তাকেই ঘর বানিয়ে ফেলেছিল শশী। একটা সিনেমার হলে কাজ পাওয়া গেল। নিয়মিত হল পরিষ্কার রাখার বিনিময়ে মিলত থাকার জায়গা। তখন বয়স ৮ বছর। এরপর একদিন একটি অনাথ আশ্রমের কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে সে। ১২ বছর বয়সে আশ্রয় মেলে সেখানেই। আর ঘটনাচক্রে কানাডা থেকে সেখানে উপস্থিত সিম্পসন পরিবার। শশীকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায় তাঁদের। তাঁদের নিজেদের ৪ ছেলেমেয়ে। এছাড়াও আরও ২৭ জনকে দত্তক নিয়েছেন সিম্পসন দম্পতি। শশী হলেন সেই পরিবারের ৩২তম সন্তান। তারপর নতুন বাবা-মায়ের হাত ধরে কানাডা যাত্রা। বাকি জীবন শুরু সেখানেই।
হোটেল ম্যানেজমেন্টের কোনো প্রথাগত শিক্ষা স্যাস সিম্পসনের ছিল না। ছিল না কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও। নর্থ ৪৪ হোটেলে তাই প্রথমে জায়গা মেলেনি। তবে শেষবার স্যাস বললেন, তাঁর নিজের কোনো মজুরি লাগবে না। শুধু তাঁর কাজে খুশি হলে যেন চাকরিটা বহাল থাকে। সেই শুরু। তারপর কিচেন অ্যাসিস্ট্যান্টের পদ থেকে মাস্টারসেফ হয়ে ওঠা সেখানেই। এখন টরন্টো শহরে খুলে ফেলেছেন আস্ত একটি রেস্টুরেন্ট। তবে মাত্র গতবছর শুরু হল রেস্টুরেন্ট, আর এর মধ্যেই এসে পড়ল করোনা মহামারী। সময়টাই ভুল হয়ে গিয়েছে, মনে করেন স্যাস। কিন্তু কঠি সময়ের সঙ্গে লড়াই করাই তো তাঁর অভ্যাস। সেই অভ্যাসের জোরেই তো আজ মাস্টারসেফ হয়ে উঠতে পেরেছেন তিনি।
Powered by Froala Editor