ভারতের প্রেমে নিজের নাগরিকত্বও বদলে নিয়েছিলেন এই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী

কলকাতার বুকে সাপের মতো ছড়িয়ে আছে কত না রাস্তা! আর সেই রাস্তার সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষের নাম। তপসিয়ার ওপর দিয়েই চলে গেছে এইরকম একটা রাস্তা। নাম, জে বি এস হ্যালডেন অ্যাভিনিউ। এই হ্যালডেন কে? গোটা বিশ্ব তাঁর পরিচয় জানলেও, আফসোসের কথা এই যে, কলকাতার খুব মুষ্টিমেয় লোকই শুনেছেন হ্যালডেনের নাম। পরিচিত হয়েছেন তাঁর কাজের সঙ্গে। বিদেশি হয়েও, আদ্যোপান্ত ভারতপ্রেমী, বাংলাপ্রেমী এই মানুষটির সঙ্গে জড়িত স্ট্যাটিস্টিকস। জড়িত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট।

১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন জন হ্যালডেন। বাবা ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী জে এস হ্যালডেন। বোন নাওমি মিচিসন-সহ পরিবারের আরও কিছু সদস্য ছিলেন লেখক। সেই পরিবারেরই অন্যতম সদস্য ছিলেন জন। অবশ্য পরবর্তীতে তাঁর নামই কিংবদন্তিদের তালিকায় ঢুকে যায়। বিজ্ঞানীসত্তা একদম ছোট থেকেই জন হলডেনের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। বাড়িতে ছিল বাবার ল্যাবরেটরি। সেখান থেকেই জীববিদ্যার প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর।

অবশ্য পড়াশোনায় বাধাও এসেছিল মাঝখানে। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেই সময় ফ্রান্স এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্রিটিশদের পক্ষে লড়াইও করেছিলেন। সেখানেও প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিলেন নিজের কাজের মাধ্যমে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আবার পুরোদমে শুরু করলেন পড়াশোনা। জেনেটিক্স নিয়ে শুরু করলেন তাঁর গবেষণা। জেনেটিক্সের গাণিতিক দিকটার দিকে বিশেষ করে নজর দিলেন তিনি। আর এভাবেই তিনি এগিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁর কাজ। উল্লেখ্য, জন হ্যালডেনই প্রথম ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মূল ধারণাটা দিয়েছিলেন। এছাড়াও, বর্ণান্ধ এবং হিমোফিলিয়া রোগগ্রস্ত মানুষদের জিন ম্যাপিং করেছিলেন তিনি।

তবে এর মধ্যেই চলে আসবে তাঁর ভারতপ্রেমের কথা। উঠে আসবে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের (আইএসআই) কথা। ১৯৫২ এবং ১৯৫৪ সালে ভারতে বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগ দিতে প্রথম আসেন জন হ্যালডেন। সেই সঙ্গে আইএসআই-টে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন তিনি। স্ট্যাটিস্টিকস এবং বায়োস্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে গবেষণাও করেছেন তিনি। এই সময়, ১৯৫৭ সালে তিনি পাকাপাকিভাবে ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে আসেন ভারতে। তারপর, আমৃত্যু এই দেশেই ছিলেন তিনি। ভালবেসেছিলেন এখানকার মানুষদের, পরিবেশকে। ভালবেসেছিলেন সমগ্র ভারতকে। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১— এই সময় যুক্ত ছিলেন আইএসআই-এর সঙ্গে। সেখানকার বায়োমেট্রি রিসার্চ ইউনিটের অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন তিনি। পরবর্তীতে বেরিয়েও আসেন সেখান থেকে। ১৯৬১ সালে, ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তারপর থেকে ১৯৬৪ - মৃত্যুর দিন পর্যন্ত উড়িষ্যাতেই ছিলেন জন হ্যালডেন। এখানেই মারা যান তিনি।

জন্মসূত্রে ভারতীয় নন। কিন্তু ভারতের প্রতি কারও থেকে কোনও অংশে কম শ্রদ্ধা ছিল না তাঁর। গোটা বিশ্ব তাঁকে মনে রেখেছে কিংবদন্তি বিজ্ঞানী হিসেবে। আইএসআই-এর শিক্ষাপ্রণালীর আধুনিকীকরণের পিছনে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি ঘরের লোক। আমাদেরই লোক।

Powered by Froala Editor