মাত্র কয়েক মাস আগের কথা। খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেল বা ওয়েব মিডিয়া— সর্বত্র ভেসে আসছিল কতকগুলো ছবি। রাস্তা জুড়ে মানুষের লাইন; কাপড়ের পোঁটলা, বাক্স নিয়ে হেঁটে চলেছেন তাঁরা। সংসার বলতে ওইটুকুই রয়ে গেছে তাঁদের সঙ্গে। চারিদিকে রোগের ভ্রুকুটি, কিন্তু পেটের কাছে সেসব কিচ্ছু না। করোনার জেরে জারি হওয়া দীর্ঘ লকডাউনে ভারত দেখেছিল সেই অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের। দেখেছিল দেশের একটা বড়ো অংশের দুরবস্থা। আধুনিক ভারত সবার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল রাস্তায়…
সম্পূর্ণ লকডাউনের সময় কেটেছে এখন। করোনার থাবা ক্রমশ টুঁটি চেপে ধরলেও ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছি আমরা। অফিস-কাছারির উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছে সাধারণ মানুষ। সমস্ত রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে নিয়েই বেরোচ্ছি আমরা। আজ থেকে বেশ কয়েকমাস আগে যে মানুষগুলো কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছিলেন, তাঁদের কী অবস্থা? কী করছেন ঐ পরিযায়ী শ্রমিকরা?
বিগত মাসগুলোয় নানা সমীক্ষা আমাদের সামনে উঠে এসেছে। আর সব জায়গাতেই দেখা গেছে এই মানুষগুলোর অর্থনৈতিক দুরবস্থার চিত্র। রেললাইন হোক বা রাস্তা— প্রাণও দিয়েছেন অনেকে। নিজের জায়গা ছেড়ে দু’পয়সা বেশি রোজগারের জন্য ভিন রাজ্যে গিয়েও পাননি নিরাপত্তা। সেখানকার কারখানার মালিকেরা তাঁদের খেয়াল রাখার কথা মনেও আনেনি। দিনের শেষে ভুগতে হয়েছে এই পরিযায়ী শ্রমিকদেরই। সামান্য যা কিছু ছিল, সেসব নিয়েই গ্রামের রাস্তা ধরা।
আর আজ? এত খারাপ ছবির মধ্যেও ভালো কিছু ছবি ফুটে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে। একটা সময় যারা সামান্য দিনমজুরের কাজ করতে বাইরে গেছিলেন, লকডাউন সেসব ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আশীর্বাদ হয়ে ফিরে এসেছে বর্ষাকাল। এই বছর ভারতে বেশ ভালো পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে মাটির ফুটিফাটা চেহারা আর দেখতে হয়নি কৃষকদের। উপরন্তু সবুজে উপচে পড়া ক্ষেত দেখে রীতিমতো আনন্দিত তাঁরা। আর এমন পরিস্থিতিতেই বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিকরা বেছে নিয়েছেন কৃষিকাজ। করোনা এবং লকডাউন তাঁদের রোজগার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এখন গ্রামে নিজেদের জমিতেই চাষ করছেন ডাল, চাল, তৈলবীজ ইত্যাদি। সমস্ত পরিশ্রম লাগিয়ে দিচ্ছেন পৃথিবীর বুকে।
আরও পড়ুন
মিলেছিল ‘অনুপ্রবেশকারী’র তকমা, ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিলেন সেই বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকরাই
আর তার সুফলও মিলেছে। এই বছর বৃষ্টির এমন সন্তোষজনক রূপ তাঁদের জমিকে সাজিয়ে দিয়েছে সুন্দরভাবে। পরিসংখ্যান বলছে, খারিফ শস্যের বিচারে গত বছরের থেকে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়েছে এই বছর। ডালজাতীয় শস্যের উৎপাদন বেড়েছে গড়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি! চাল উৎপাদন ১৯ শতাংশ এবং তৈলবীজ প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। কাজেই, কৃষিক্ষেত্রের অবস্থাটা ঠিক কী সেটা আর বলে দিতে হবে না। আর এতেই অবস্থা ফিরেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। ভরা সবুজ জমি তাঁদের মুখে ফুটিয়েছে হাসি। তাঁদের আশা, এতদিনের দুঃসময়ের অবসান এবার বোধহয় হবে। এখনও বৃষ্টি চলবে। কাজেই পরিযায়ী শ্রমিকরা কৃষিকাজের মাধ্যমে আবারও জীবনের রাস্তায় ফিরতে চাইছেন। শুধু তাঁরাই নন, এই দিকে তাকিয়ে আছে দেশও। অর্থনীতির উন্নতি করতে গেলে কৃষির দিকেও নজর দিতে হবে। সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন সবাই।
আরও পড়ুন
বাড়িতেই ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা তুলে ধরতে হাতিয়ার র্যাপ, ডাক এল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও