উন্নত পরিকাঠামোর জন্যই প্রয়োজন ফি-এর বৃদ্ধি—জেএনইউ কর্তৃপক্ষের যুক্তি ঠিক না ভুল?

ফের শিরোনামে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। হ্যাঁ, এবারেও ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু শুধু সেইটুকু নয়। দিল্লি তথা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরস্ত্র আন্দোলনের ওপর নেমে এসেছে পুলিশের লাঠি। মাথা ফেটেছে ছাত্রের, আহত একাধিক। স্বাভাবিকভাবেই, যা নিয়ে ফের উত্তাল হয়েছে দেশ। পরিস্থিতি উত্তাল হলে একাধিক প্রশ্ন জড়ো হয়। এক্ষেত্রেও হচ্ছে। পুলিশের লাঠিচার্জ নিয়ে সমালোচনার পরেও অনেকে জানতে চাইছেন, এই আন্দোলন কেন?

অক্টোবর মাসের শেষ দিকে, জেএনইউ কর্তৃপক্ষ এক লাফে প্রায় ৪০ শতাংশ ফি বৃদ্ধি করেন। এতদিন ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেলের সিঙ্গল রুমের জন্য মাসে দিতে হত ২০ টাকা। সেই ফি বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। আর, ডবল রুমের ক্ষেত্রে, পড়ুয়া-পিছু ফি ১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে, মাসে মোট ১৭০০ টাকা দিতে হবে প্রত্যেক পড়ুয়াকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বক্তব্য, প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সার্ভিসের জন্য বছরে খরচ হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। এই টাকা এতদিন ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের সাধারণ তহবিল থেকেই দেওয়া হত। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের থেকে এই টাকা পেলে হোস্টেলের রক্ষণাবেক্ষণ আরও ভালোভাবে করা যাবে।

কিন্তু, জেএনইউ-র ছাত্রছাত্রীরা এই ফি বৃদ্ধি মানতে চায়নি। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছিল ছাত্রছাত্রীদের। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার, বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে জেএনইউ ক্যাম্পাস থেকে সংসদ ভবনের দিকে মিছিল শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা। পথে তাদের আটকায় পুলিশ। চলে লাঠিচার্জ। আহত হয় অনেক ছাত্রছাত্রী। এই ঘটনার রেশ পৌঁছোয় সংসদ পর্যন্তও। পুলিশের লাঠি চালানোর নিন্দা করেছে সমাজের নানা অংশই।

কিন্তু, তারপরেও মূল প্রশ্নটা বহাল আছেই। কেন ফি বাড়াতে হল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে? পরিকাঠামো ও পরিষেবা ভালো করার যুক্তিতে কি ফি বৃদ্ধির যুক্তি ন্যায্য? আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের যুক্তি, এমন অনেকই জেএনইউ-তে পড়তে আসে, যারা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। খুব বেশি ফি দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আখেরে বিপদে পড়ল সেইসব নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরাই। কর্তৃপক্ষ পালটা বলছেন, দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে ফি কমানোর প্রস্তাব তাঁরা দিয়েছিলেন, ফি-এর প্রস্তাবিত হারও কমিয়ে আনা হয়েছিল। তার পরেও আন্দোলন প্রত্যাহার করেনি ছাত্রছাত্রীরা। সেটা অনৈতিক।

আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা জানাচ্ছে, ফি বৃদ্ধি নিয়ে দরদামে তারা আগ্রহী নয়। তারা চায় বর্ধিত ফি-র সবটুকুই মকুব হোক। জনগণের ট্যাক্সে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ব্যয়ভার চলে। সেই সরকার কেন পড়ুয়াদের ফি বাড়াবে? যেখানে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে বিপুল পরিমাণ কর ছাড় দিচ্ছে সরকার, সেখানে পড়ুয়াদের ওপর এই ফি বৃদ্ধি-র কোপ মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। যদি পরিকাঠামোর উন্নতিসাধনই লক্ষ্য হয়, তাহলে তার ব্যয়ভার পড়ুয়াদের থেকেই নেওয়া হবে কেন? দেশের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার পরিকাঠামো এমনিতেই বিপর্যস্ত হচ্ছে রোজ। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমছে। গবেষকদের অবস্থা শোচনীয় হচ্ছে। সেখানে ছাত্রদের থেকেই বেশি টাকা নিয়ে উন্নত পরিকাঠামো দেওয়ার যুক্তি ভ্রান্ত ও অন্যায়—এমনটাই বক্তব্য জেএনইউর ছাত্রছাত্রীদের।

বিতর্কটা এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের চৌহদ্দিতে আটকে নেই। ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশেই।

More From Author See More