১৪৯ বছরের ব্যবস্থায় ইতি, বন্ধ হল জম্মু ও কাশ্মীরের ষান্মাসিক রাজধানী পরিবর্তন

ভারতের প্রতিটা রাজ্যেই রয়েছে একটি করে রাজধানী। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা দুটি। গ্রীষ্মকালের জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর, আর শীতকালের রাজধানী জম্মু। এই তথ্য আমরা সবাই এতদিন জেনে এসেছি। স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই চলে আসছে এই ঋতু ভিত্তিক রাজধানী পরিবর্তনের রীতি। তখন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল কাশ্মীরে। অবশেষে ১৪৯ বছরের এই ব্যবস্থার ইতি ঘটতে চলেছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশিকায় সেই কথাই জানানো হয়েছে।

গতবছরই ষান্মাসিক রাজধানী পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জম্মু হাইকোর্টে মামলা শুরু হয়। এবং সেই মামলার শেষে বিচারকরা রায় দেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পিছনে কোনো যুক্তি নেই। আনুমানিক প্রত্যেক বছর এই কাজে ২০০ কোটি টাকা খরচ করতে হয় সরকারকে। আদালতের এই রায়ের প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, এবছর জম্মুর কোনো অফিসারকে শ্রীনগরে বা শ্রীনগরের কোনো অফিসারকে জম্মুতে যেতে হবে না। যদি কেউ ইতিমধ্যে স্থান পরিবর্তন করে থাকেন, তাহলেও তাঁকে আবার নিজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এরপরেও কোনো একটি স্থায়ী রাজধানীর পথে হাঁটছে না সরকার। বরং সমস্ত সরকারি ব্যবস্থাকে অনলাইন মাধ্যমে নিয়ে এসে ই-গভর্নেন্স তৈরির কথাই ঘোষণা করা হয়েছে।

১৮৭২ সালে জম্মুর ডোগরা শাসকদের সময় থেকে ষান্মাসিক রাজধানী পরিবর্তনের এই নিয়ম শুরু হয়। তখন থেকে এই ব্যবস্থা দরগা মুভ নামে পরিচিত। কেবলমাত্র সরকারি নথি স্থানান্তরের জন্যই পরে স্বাধীন ভারত সরকারকে বিশেষ হাইওয়ে বানাতে হয়। ১৯৮০ সাল থেকেই এই বিপুল অর্থ অপচয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন অন্য রাজ্যের জনপ্রতিনিধিরা। যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখনও কোনো প্রতিবাদ জানাননি। বরং দুটি রাজধানী থাকায় দুটি শহরের অর্থনীতিরই যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটে। ফলে মোটের উপর তাঁরা খুশি। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে বারবার স্থান পরিবর্তন কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া স্থানান্তরের সময় বহু সরকারি নথি নষ্ট হয় বা হারিয়ে যায়। এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখেই ই-গভর্নেন্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে রাজধানী এখনও আগের মতোই বদলাবে। তবে তা ভার্চুয়ালি। কেবলমাত্র অতি গোপনীয় নথিই স্থানান্তরিত হবে রেলওয়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে। মূলত অর্থের অপচয় কমাতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে রাজকার্য কতটা সহজভাবে পরিচালনা করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ম্যাগনাম ফাউন্ডেশনের ফেলো তালিকায় কাশ্মীরের চিত্রসাংবাদিক সানা