পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী, বাংলার প্রথম রূপান্তরকামী হিসেবে করোনাকে হারালেন জিয়া

কথা হচ্ছিল স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থা নিয়ে। এই মহামারী করোনার পরিস্থিতিতে যাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে লড়াই করে যাচ্ছেন, সাধারণ মানুষ কি তাঁদের সেই লড়াইয়ের মর্যাদা দিচ্ছেন? জিয়া দাসের অভিজ্ঞতা অন্তত সে কথা বলে না। তিনি নিজে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া অঞ্চলে তাঁর বাস। সেখানে প্রতিবেশীরা সবসময় সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছেন তাঁর দিকে। তাঁর শরীর থেকেই নাকি ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা ভাইরাস। অথচ ভাইরোলজিস্টদের বক্তব্যের সঙ্গে একথা একেবারেই মেলে না। জিয়া বলছিলেন, "আর কিছুই না। একটা আতঙ্ক মানুষকে গ্রাস করেছে। আর সেই কারণেই নানা ভ্রান্ত ধারণার আশ্রয় নিচ্ছেন তাঁরা। সবসময় দেখা হচ্ছে সন্দেহের চোখে। আসলে পুরোটাই সচেতনতার অভাব।"

অবশ্য এমন সন্দেহের মধ্যে তাঁকে আগেও বহুবার পড়তে হয়েছে। সেটা অবশ্য তাঁর লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে। সমাজের চোখে তিনি ‘সুস্থ’ নন। কারণ তিনি রূপান্তরকামী।

তবে এসবের মধ্যেও মানুষের চিকিৎসার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন তিনি। সারাদিন অনেক করোনা রোগীর চিকিৎসার কাজেই যুক্ত থাকেন। এর মধ্যেই কখন তাঁর শরীরেও বাসা বাঁধল করোনা ভাইরাস। গতমাসের ২৬ তারিখ থেকে দিন দুয়েক জ্বর ছিল শরীরে। তারপর আর তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অবহেলা করা ঠিক হবে না বলেই মনে করেছিলেন তিনি। আর ২ জুন তারিখে লালারস পরীক্ষা করতেই দেখা যায় জ্বরের কারণ আসলে করোনা ভাইরাস। অবশেষে ৬ জুলাই নিউ বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি হলেন তিনি।

অবশ্য শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। ১৬ জুলাই সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় তিনি মুক্তি পান। এদেশে এখনও রূপান্তরকামী মানুষদের চিকিৎসা পেতে নানা বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়। তবে বাঙ্গুর হাসপাতালে তাঁকে এমন কোনো বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়নি বলেই জানিয়েছেন জিয়া। আর এই জন্য তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আর বাংলা তো বটেই, সম্ভবত দেশেও তিনিই প্রথম রূপান্তরকামী মানুষ, যিনি করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আপাতত তিনি একজন পরিচিত ব্যক্তির বাড়িতে আছেন। এই অবস্থায় একা থাকার সাহস তাঁর নেই। তাছাড়া সুস্থ হয়ে ফিরে এলেও কি পাড়ার মানুষ ঠিকভাবে মেনে নিতে পারবেন? নাকি সন্দেহ করবেন তাঁর শরীর থেকে এখনও ঘটতে পারে সংক্রমণ? এসব কিছুই অবশ্য ভাবতে চাইছেন না জিয়া। ভাইরাসের আক্রমণ থেকে ফিরে আসাও তো একটা লড়াই। আর সেই লড়াই শেষে এখন ক্লান্ত তিনি। এই ক্লান্তি কাটিয়ে উঠে আবারও ফিরবেন কর্মক্ষেত্রে। অপারেশন থিয়েটারে অসংখ্য রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তবে লড়াই যে তাঁর সারা জীবনের সঙ্গী। নিজের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করাই তো এই সমাজে সব থেকে কঠিন লড়াই।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
এক সময় ছিল ‘হটস্পট’, দিল্লির করোনা-জয় উদ্বুদ্ধ করছে গোটা দেশকে

Latest News See More