ইতালিয়ান থেকে ভাষান্তর, প্রকাশিত ঝুম্পা লাহিড়ীর তৃতীয় ইংরাজি উপন্যাস

তাঁর লেখায় বরাবর ফুটে উঠেছে শরণার্থীদের যন্ত্রণার কথা। অভিবাসন, মধ্যবিত্ত পরিবার, জীবন-জীবিকার দোলাচল আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসে। ঝুম্পা লাহিড়ী। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাহিত্যিকদের তালিকায় রয়েছে তার নাম। ইংরাজি সাহিত্যের জন্য এই শতকের শুরুতেই পেয়েছিলেন পুলিৎজার। এবার প্রকাশিত হল তাঁর তৃতীয় ইংরাজি উপন্যাস ‘হোয়ারঅ্যাবাউটস’। এর আগে ২০১৩ সালে প্রকাশ পেয়েছিল ‘দ্য লোল্যান্ড’। প্রায় আট বছর পর আবার ইংরাজিতে প্রত্যাবর্তন করলেন ঝুম্পা লাহিড়ী।

আজ ‘পেঙ্গুইন’ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘হোয়ারঅ্যাবাউটস’। যদিও এই গল্প একেবারে নতুন নয়। ২০১৮ সালেই ইতালিয়ান ভাষায় প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর লেখা উপন্যাস ‘দোভে মি ভো’। ‘হোয়ারঅ্যাবাউটস’ কার্যত এই উপন্যাসেরই ইংরাজি অনুবাদ। এবং তিনি নিজেই ইতালিয়ান থেকে এই বই অনুবাদ করেছেন ইংরাজিতে।

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে হঠাৎ ইতালিয়ান ভাষায় সাহিত্যরচনার দিকে ঝুঁকেছিলেন কেন তিনি? এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বভঙ্গিতেই জানিয়েছেন সেই উত্তর। তা হল অস্তিত্বসংকট। হ্যাঁ, ইংরাজি তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দিলেও, এই ভাষা যে কোনোদিনই তাঁর নিজস্ব ছিল না, সে কথাই উঠে এসেছে তাঁর কণ্ঠে। বাঙালি হলেও, ঝুম্পা লাহিড়ীর জন্ম লন্ডনে। তারপর বড় হয়ে ওঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ইংরাজি ভাষাতে পড়াশোনা করতে হয়েছে বলেই, সেই ভাষাটাকেই লেখালিখির প্রাথমিক মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সুযোগ থাকলে বাংলাতেই সাহিত্যচর্চা করতেন বলেও জানাচ্ছেন তিনি। ঠিক এমন একটা জায়গা থেকেই, ইতালিয়ান ভাষায় গল্প লিখতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ঝুম্পা লাহিড়ী। চেয়েছিলেন নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করতে। ২০১২ সালের পরে দীর্ঘদিন তিনি কাটিয়েছেন রোমে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পরেও ইতিলিয়ান ভাষাকে আয়ত্ত করতে বার বার ছুটে গেছেন ইতালিতে। ঘুরে বেড়িয়েছেন ফ্লোরেন্স থেকে ভ্যাটিকান সিটির গলি-ঘুঁজি।

‘হোয়ারঅ্যাবাউটস’-এর প্রাথমিক সংস্করণ যে শুধু ইতিলিয়ান ভাষাতেই রচিত, তা নয়। নিজের চেনা পরিধি, গল্পের ধাঁচ ভেঙেই এই গল্প বুনেছেন তিনি। রোমকে কেন্দ্র করেই বেড়ে উঠেছে গল্পের মায়াজাল। কেন্দ্র চরিত্র একাকী এক মহিলা। কোনো নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটও নেই গল্পের। শুধু কেন্দ্রীয় চরিত্রটির চোখ দিয়েই দেখানো হয়েছে ইতালির সভ্যতার ঝলক। পার্শ্বচরিত্র থাকলেও তাঁরা অনেকটাই নিষ্প্রভ।

আরও পড়ুন
১০৫ মিনিটে শেষ ৩৬টি বই, ৫ বছরের কিয়ারার রেকর্ড

২০১৮ সালে প্রকাশের পর ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল ‘দোভে মি ভো’। অবাক করেছিল তাঁর শব্দের ব্যবহার। আসলে সাহিত্যের চিরাচরিত ‘ক্লাসিক্যাল’ ছক ভেঙে একেবারে কথিত ভাষায় ঢুকে পড়েছিল উপন্যাসের মধ্যেকার কথোপকথনরা। যা বিস্মিত করেছিল সমালোচকদেরও। এবার যেন আবার নতুন করে পুনর্জন্ম নিল ‘দোভে মি ভো’। ফলত, প্রেক্ষাপট জানা থাকলেও এই বই নিয়ে উত্তেজনার অভাব নেই পাঠকদের মধ্যে। ইতালিয়ান থেকে ইংরাজিতে প্রত্যাবর্তনের পর কতটা নিজেকে বদলে নিয়েছেন ঝুম্পা লাহিড়ী? সদ্য-প্রকাশিত উপন্যাসে সেই উত্তরই খুঁজছে গোটা বিশ্ব…

আরও পড়ুন
ব্রিটিশ পুলিশ পুড়িয়ে দিয়েছিল বই, ৮৮ বছর পর ফিরল ‘মেদিনীপুরের সরল ভূগোল’

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কমিউনিটি কিচেন থেকে আমফান-দুর্গতদের সাহায্য - ইন্দ্রাণী রায়-কে ভুলবে না বইপাড়া

Latest News See More