দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে জমেছিল পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের তকমা। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব তো ছিলই, সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা শিক্ষাব্যবস্থায়। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে পাড়ি দিতেন। কিন্তু করোনা অতিমারীতে তাঁদেরও বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে। ঠিক এই সময় ঘটে গেল এক ম্যাজিক। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার প্রতিটা পঞ্চায়েতে তৈরি হয়ে গেল একটি করে কমিউনিটি লাইব্রেরি। জেলার ১১৮টি পঞ্চায়েতের কোথাও আর পড়াশোনার জন্য বইয়ের অভাব নেই।
গত নভেম্বর মাসে জামতাড়া জেলার ডেপুটি কমিশনার ফইজ আহমেদ মুমতাজ হাজির হয়েছিলেন জনতার দরবারে। সেখানে নানা মানুষের নানা অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ ছিল পঠনপাঠনের পরিকাঠামোর অভাব। গ্রামাঞ্চলের বহু মেধাবী পড়ুয়াই সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন তা জানেন না। সবকিছুর মধ্যে এই সমস্যাটাই সবচেয়ে জরুরি বলে মনে হয় মুমতাজের। আর উপায়ও পেয়ে গেলেন কিছুদিনের মধ্যেই। প্রায় প্রতিটা অঞ্চলেই বেশ কিছু সরকারি বাড়ি পড়ে রয়েছে, যেগুলো এখন আর কোনো কাজে লাগে না। কোনোটা কোনো এক সময় পঞ্চায়েতের অফিস ছিল। কোনোটা আবার ব্রিটিশ আমলে খাজনা আদায়ের জন্য ব্যবহার করা হত। সেইসমস্ত পরিত্যক্ত বাড়িকেই মেরামতি করে ব্যবহারযোগ্য করে তুললেন তিনি। আর তারপর চাঁদা তুলে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাহায্যে কেনা হল বই, আলমারি এবং টেবিল-চেয়ার। নভেম্বর মাসে কাজ শুরু করে আগস্ট মাসের মধ্যেই ১১৮টি পঞ্চায়েতে লাইব্রেরি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
শুধুই পাঠ্যবই নয়, সেইসঙ্গে স্থানীয় পড়ুয়াদের সরকারি চাকরির প্রস্তুতির দায়িত্বও নিয়েছেন জেলার সরকারি আধিকারিকরা। প্রতি রবিবার প্রত্যেক লাইব্রেরিতে স্থানীয় পুলিশ অফিসাররা ক্লাস নেন। আর বুধবার ক্লাস নেন সিভিল সার্ভিস অফিসাররা। এতদিন সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি প্রায় হাতের নাগালের বাইরেই ছিল সকলের। এবার সেই সমস্যারও সমাধান হল। সেইসঙ্গে গ্রামের মেয়েরাও পড়াশোনার সুযোগ পেলেন। আজও অধিকাংশ গ্রামেই মহিলাদের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না। সেখানে গ্রামে থেকেই স্বপ্নপূরণ সম্ভব করে তুলল এই প্রকল্প। জামতাড়া জেলার এই প্রকল্প আরও একবার প্রমাণ করল, সরকারি কর্তারা চাইলে দেশের অনেক সমস্যারই সমাধান করতে পারেন।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ক্যানসার-আক্রান্তদের জন্য লাইব্রেরি তৈরি ৯ বছরের বালিকার