দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও একটা বসন্ত। ছোটানাগপুরের ছৌ শিল্পীদের আরও এক উৎসবের সময় পেরিয়ে গেল। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে মানভূম, সিংভূম, পুরুলিয়ার অসংখ্য শিল্পী জড়ো হন বিহারের সরখাইলের ভগবান বীরসা মুন্ডা স্টেডিয়ামে। আর সরখাইলের স্থানীয় শিল্পীরা তো থাকেনই। ভারতের বুকে ছৌ নাচের সবচেয়ে বড় উৎসবের সাক্ষী থাকতে ভিড় জমান অসংখ্য দর্শক। উৎসব প্রাঙ্গণকে ঘিরে রীতিমতো মেলা বসে যায়। অবশ্য এ-বছর সেই উৎসব স্থগিত। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সমস্ত অনুষ্ঠানই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিদেশের কাছে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় লোকনৃত্য বলতে ছৌ নাচের নাম করতেই হবে। কাগজ বা মাটির তৈরি বিরাট বিরাট মুখোশ নিয়ে দর্শকদের সামনে এই নাচ পরিবেশন করা হয়। আর ভারতে ছৌ নাচের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন ঘরানাটি হল সরখাইল ঘরানা। ১৮৩৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিত এই নাচ। পুরুলিয়ার জনপ্রিয় ঘরানার তখনও জন্মই হয়নি। অবশ্য কালক্রমে অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে এই ঐতিহাসিক সংস্কৃতিও। তবে তার সংরক্ষণের প্রচেষ্টাও চলছে। এই শিল্পটি সংরক্ষণের জন্য জামশেদপুর শহরে তৈরি হয়েছে ছৌ শিল্প কলাকেন্দ্র। এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগেই প্রতিবছর সরখাইল শহরে জাতীয় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। ছৌ নাচের বিভিন্ন ঘরানার শিল্পীরা যেমন থাকেন, তেমনই কত্থক বা ভরতনাট্যমের শিল্পীরাও আসেন। সব মিলিয়ে মেতে ওঠে কয়েকটা দিন।
ছৌ নাচ বলতেই সাধারণত আমাদের মনে আসে নানান পৌরাণিক বিষয় নিয়ে নৃত্য উপস্থাপনা। তবে সরখাইলে গেলে আপনি দেখতে পাবেন, সমসাময়িক নানা ঘটনাও উঠে আসছে নাচের মাধ্যমে। এই সবই কলাকেন্দ্রের উদ্যোগে সম্ভব হয়েছে। শিল্পের আধুনিকীকরণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে এই প্রতিষ্ঠান। এমনকি এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁরা বসে নেই। এর মধ্যেও শিল্পকে যুক্ত করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। ছৌ শিল্পীদের হাতে তৈরি মুখোশের বদলে তৈরি হচ্ছে মাস্ক। কাগজের তৈরি এইসব মাস্কের মধ্যে ছৌ শিল্পের চিরন্তন স্বাদটি কিন্তু অক্ষত থেকেছে। মহামারীর মুখে দাঁড়িয়ে শিল্পীদের কাছে এও এক উৎসব। উৎসবের মধ্যে একধরনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি। আপাতত ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকাটাই মুখ্য। তারপর আবার শিল্পীদের নাচে মুখরিত হয়ে উঠবে উৎসব প্রাঙ্গণ।