প্যারোডিকে অস্ত্র করেই করোনা-যুদ্ধে সামিল ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক

করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গও এবার শহরের সীমানা পেরিয়ে গ্রামেগঞ্জে হানা দিয়েছে। আর সেখানে সচেতনতার প্রচার করা বেশ কঠিন। অন্তত ভারতের মতো দেশে। ঠিক এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই হাতে মাইক্রোফোন তুলে নিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের ঠিকাশ্রমিক সুমিত মিশ্র। বেছে নিয়েছেন গ্রামেগঞ্জে প্রচারের এক অতি প্রাচীন পদ্ধতিকেই। গানের প্যারোডি। নানা জনপ্রিয় গানের সুরে নতুন কথা বসিয়ে তিনি মানুষকে সচেতন করে চলেছেন অতিমারীর বিষয়ে।

ঝাড়খণ্ডের পাকুর জেলার বাসিন্দা সুমিত মিশ্র। করোনায় কাজ হারানো অসংখ্য শ্রমিকের মধ্যে তিনিও একজন। তবে নিজের উদ্যোগেই তৈরি করে নিয়েছেন এক অন্য পরিচয়। তাঁর মতে, এই সময় যে যেভাবে পারবে অতিমারী মোকাবিলায় এগিয়ে আসা উচিৎ। আর সুমিত যখন গান গাইতে ভালোবসেন, তখন সেটাকেই কাজে লাগাবেন না কেন? ছোটোবেলায় দেখতেন সার্কাসের বিজ্ঞাপনের জন্য বা অন্য নানা প্রচারের কাজে বলিউডের জনপ্রিয় গানের প্যারোডি বানিয়ে মাইকিং করা হত। এখন সেসবের রেওয়াজ উঠে গিয়েছে। তবে সুমিত তাঁর প্যারোডিগুলিকে নিয়ে এসেছেন সামাজিক মাধ্যমে। আর দেখতে দেখতে তার জনপ্রিয়তাও বাড়তে শুরু করেছে।

গতবছর মার্চ মাসে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পরেই সুমিত দেখলেন গ্রামেগঞ্জে তখনও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বা মাস্ক পরার বিষয়ে সচেতনতা নেই বললেই চলে। তখনই ঠিক করে ফেললেন তাঁর কাজ। ১০ এপ্রিল প্রথম সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্যারোডির ভিডিও প্রকাশ করলেন। দু-তিনটে ভিডিও প্রকাশ পেতেই মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকল। হিন্দি এবং সানতালি, উভয় ভাষাতেই প্যারোডি বাঁধতে শুরু করলেন সুমিত। এখনও অবধি ১৫টির বেশি ভিডিও প্রকাশ করেছেন তিনি। তার মধ্যে আছে ভ্যাকসিন বিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বার্তাও।

সুমিতের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্তারাও। পঞ্চায়েত প্রধান দীপা মাল্টো জানিয়েছেন, পাকুর জেলার অধিকাংশ অধিবাসীই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাঁরা সানতালি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বোঝেন না। নানা ধরণের সরকারি প্রচারই তাই তাঁদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছয় না। সেখানে সুমিত মিশ্রর প্যারোডি পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের ঘরে ঘরে। পাকুর জেলার ডেপুটি কমিশনার কুলদীপ চৌধুরীও জানিয়েছেন, সুমিতের প্যারোডি ইতিমধ্যে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ভ্যাকসিন বিরোধী যে অপপ্রচার শুরু হয়েছিল, তা অনেকটাই ঠেকাতে পেরেছেন তিনি। এর ফলে প্রশাসনের পক্ষে কাজ করাও সহজ হয়েছে। আর নিজের এই জনপ্রিয়তায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি সুমিত মিশ্র। তাঁর মতো আরও অনেক শিল্পী যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে করোনা মোকাবিলার কাজটা অনেক সহজ হবে বলেই মনে করছেন তিনি।

আরও পড়ুন
মহাকাশেই নতুন গানের রিলিজ, ঐতিহাসিক নজির ‘কোল্ডপ্লে’-র

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গণতন্ত্রের সমর্থনে গান গেয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা মায়ানমারের কিশোরী