মাটির দেওয়ালই ব্ল্যাকবোর্ড, গোটা গ্রামকেই ক্লাসঘর বানিয়ে নজির শিক্ষকের

গ্রামজুড়ে বেশ কয়েকঘর আদিবাসী পরিবারের বাস। দিনমজুরি করেই দিন চলে সকলের। লকডাউনে সেই রাস্তাটাও বন্ধ। এর মধ্যে ছেলেমেয়েদের অনলাইন পড়াশোনার জন্য স্মার্টফোনের ব্যবস্থা করা দিবাস্বপ্ন। আর কোনোভাবে স্মার্টফোন যদি বা মেলে, গ্রামে ইন্টারনেট কানেকশনই তো নেই। কিন্তু এভাবেই কি থমকে যাবে বাচ্চাগুলোর পড়াশোনা? এই বিষয়টাই মেনে নিতে পারেননি ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার দুমার্থার গ্রামের শিক্ষক স্বপন কুমার। আর তাই তিনি গ্রামের মাটির বাড়ির দেোয়ালগুলোকেই ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে তুললেন। আর রাস্তায় বসেই শুরু হল পড়াশোনা।

২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। এর ঠিক একমাসের মধ্যেই স্বপন কুমার এবং তাঁর সহকর্মীরা ঠিক করলেন, ছেলেমেয়েগুলোর পড়াশোনা বন্ধ করা যাবে না কোনোভাবেই। গ্রামবাসীদের অনুমতি নিয়ে তাঁদের মাটির দেয়ালগুলোয় আঁকলেন নানা অক্ষরমালা। একটু উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য আঁকা হল গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোলের নানা বিষয়ের আনুষাঙ্গিক নানা ছবি। নিচে লেখা ছবিগুলির বিষয়বস্তু। প্রতিদিনের অনুশীলনের প্রশ্নমালাও লেখা হয় সেই বাড়ির দেোয়ালে। আর পড়ুয়ারা সেই দেওয়ালেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লিখে রাখে। এভাবেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে পড়াশোনা। দেড় বছর ধরে গোটা গ্রামটাই হয়ে উঠেছে আস্ত একটা ক্লাসরুম।

স্বপন কুমারের এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জেলাশাসক নারায়ণ সিং। এমনকি কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকেও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। এবছর জাতীয় শিক্ষক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন স্বপন কুমার। জেলাশাসক নারায়ণ সিং-এর কথায়, স্বপন কুমারের এই মডেল দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পরিসংখ্যান বলছে, অতিমারী পরিস্থিতিতে দেশের ৪০ শতাংশ পড়ুয়া শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত কেবলমাত্র পরিকাঠামোগত কারণে। আরও অন্তত ২৫ শতাংশ পড়ুয়ার পক্ষে অনলাইন পড়াশোনা কঠিন হয়ে পড়ছে। ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া আজও প্রকল্পের স্তরেই থেকে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এমন উদ্যোগই পারে শিক্ষাব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বেসরকারিকরণের পথে ২৪৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড’