কথায় বলে, শিক্ষা সবার জন্য। প্রতিটা মানুষ, প্রতিটা শিশুর পড়াশোনা করার অধিকার আছে। কিন্তু আমাদের চারদিকে তাকালে কি সেটা দেখা যায় সবসময়? ধরা যাক এখন, এই লকডাউনের সময় স্কুল কলেজ বন্ধ। কাজেই অনলাইন মাধ্যমেই চলছে ক্লাস; চলছে ভিডিও কনফারেন্স। কিন্তু সবার পক্ষে কি সেখানে থাকা সম্ভব? এই ব্যাপারটাই ভেবেছিলেন শ্যামকিশোর সিং গান্ধী। মনে করছিলেন ঝাড়খণ্ডের গ্রামে তাঁর স্কুলের কথা। আর সেই ভাবনা থেকেই অভিনব পদক্ষেপ নিলেন তিনি। গোটা গ্রামে লাগিয়ে দিলেন লাউডস্পিকার। এখন বাড়িতে বসেই সবাই ক্লাস করছে, পড়াশোনা করতে পারছে!
ঝাড়খণ্ডের ডুমকা জেলার বানকাঠি গ্রামের একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষক শ্যামকিশোরবাবু। তাঁর স্কুলে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ২৪৬ জন পড়ুয়া আছে। লকডাউনের ফলে সেই স্কুলও বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে পড়াশোনা? অন্যান্য জায়গায় যেভাবে হচ্ছে, সেই অনলাইন ক্লাস করানোর সিদ্ধান্তই নেন তিনি এবং তাঁর শিক্ষকরা। কিন্তু সমস্যা সেখানেই। এই পড়ুয়াদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশেরই ফোন নেই! আর থাকলেও, সেটা স্মার্টফোন নয়। অনলাইন ক্লাস তো সেখানে হবে না। তাহলে? স্রেফ একটা মোবাইল নেই বা ভালো নেট নেই বলে কি ওই বাচ্চারা পড়তে পারবে না?
এই চিন্তাই মাথায় ঘুরছিল শ্যামকিশোর গান্ধীর। আর তারপরেই তৈরি করলেন ‘মাস্টারপ্ল্যান’। বানকাঠি গ্রাম জুড়ে বেশ কিছু জায়গায় লাগিয়ে দিলেন লাউডস্পিকার। অনলাইন ক্লাসে টিচাররা যা পড়াচ্ছেন, সেটা সরাসরি স্পিকারের মাধ্যমে গোটা গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। কোনো প্রশ্ন থাকলে শিক্ষকদের কাছে চলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা, আবার কখনও ফোন করে নিচ্ছে। সমস্ত ব্যবধান মুছে গিয়ে ‘শিক্ষা সবার জন্য’- এই মন্ত্রটাই উঠে আসছে এখানে। এমন খবরই ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য জায়গাতেও। দূরত্ব বজায় রেখেও সব জায়গায় শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেটাই করে দেখালেন একজন প্রকৃত শিক্ষক।
Powered by Froala Editor