বিগত দু’দশকে ভারতে দ্রুত গতিতে এগিয়েছে প্রযুক্তি। পানীয় জল, শিক্ষাকেন্দ্র, মোটরচালিত যান চলাচলের রাস্তার মতো পরিষেবা পৌঁছে গেছে গ্রামাঞ্চলেও। তবে প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে এখনও একটি বড়ো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। কোথাও কোথাও সৌরশক্তি পৌঁছালেও ভারতের বহু প্রান্তিক অঞ্চলেই পৌঁছায়নি স্থায়ী বিদ্যুৎশক্তি। এবার এই সমস্যার সমাধান করতেই অভিনব পদক্ষেপ নিলেন ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) রামগড় ক্যান্টনমেন্টের এক ব্যক্তি। নিজের হাতেই বানিয়ে ফেললেন আস্ত টারবাইন (Turbine)।
কেদারপ্রসাদ মাহাতো (Kedar Prasad Mahato)। কোনো প্রযুক্তিবিদ কিংবা বিশেষজ্ঞ নন তিনি। এমনকি স্নাতক স্তরের পড়াশোনাও শেষ করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। তা সত্ত্বেও কারোর সাহায্য ছাড়াই গোটা গ্রামে বিদ্যুৎ আনার বন্দোবস্ত করে ফেললেন তিনি। হ্যাঁ, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এমনটাই সত্যি। তবে এই লড়াই আজকের নয়। দীর্ঘ আঠারো বছরের কঠোর প্ররিশ্রম এবং একাগ্রতাকে হাতিয়ার করেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন কেদার।
২০০৪ সালের কথা। তখন কেদার স্কুলপড়ুয়া। স্কুলেরই একটি প্রোজেক্ট করতে গিয়ে প্রথম ১২ ভোল্টের শক্তিকোষ তৈরি করেছিলেন কেদার। তাতে অবশ্য আলো-পাখা চালানো দূরের কথা, বড়োজোর এলইডি আলো জ্বালানো যেতে পারে। তবে সেই সাফল্যই জেদের সঞ্চার করে কেদারের মনে। শুরু হয় বাণিজ্যিক টারবাইনের অনুকরণে শক্তি উৎপাদনের কর্মসূচি। প্রযুক্তিগত শিক্ষা বলতে কেবলমাত্র কয়েকটি বই-ই ছিল তাঁর সম্বল। অল্প কিছু হাতের কাজ করে জমানো টাকা দিয়েই কিনতেন কয়েল, চুম্বক, আর্মেচার ও টারবাইনের অন্যান্য নানান সামগ্রী। টারবাইন তৈরি ও গ্রামে বিদ্যুৎ আনার নেশায় এখনও নিজের স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে উঠতে পারেননি কেদার।
বছর কয়েক আগে তাঁর গ্রাম থেকে মাইল কয়েক দূরে সেনেগড়া নদীতে নিজদের হাতে নির্মিত প্রথম টারবাইন স্থাপন করেন তিনি। পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছিল তাঁর সেই প্রকল্প। তবে বন্যার স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় সেই টারবাইন। সম্প্রতি, ওই একই নদীতে পুনরায় টারবাইন স্থাপন করেন কেদার। তবে আগেরবারের ভুল থেকে শিক্ষা হয়েছে তাঁর। কংক্রিটের পিলার স্থাপন করেই এবার বসানো হয়েছে টারবাইন। সবমিলিয়ে যা ৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। গ্রামে প্রতিটি পরিবারে এতে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে না ঠিকই, তবে রাতে গ্রামের পথ এবং একটি মন্দিরে আলোর বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন তিনি। তাই বা কম কি! নিষ্ঠার সঙ্গে কোনো কাজ করলে যে অসম্ভবকেও জয় করা যায়, তারই প্রত্যক্ষ উদাহরণ ঝাড়খণ্ডের কেদার মাহাতো…
Powered by Froala Editor