বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের একেকটি ভয়ঙ্কর মহামারীর কথা। সেগুলোর কোনোটাই হয়তো করোনার মতো সারা পৃথিবীব্যাপী আতঙ্কের সৃষ্টি করেনি, কিন্তু স্থানীয় পরিসরে তাদের ভয়াবহতাও কম ছিল না। ঠিক তেমনই এক মহামারী ঘটেছিল আজ থেকে ৮০ বছর আগে। পোল্যান্ডের ওয়ারস শহর তখন নাৎসি জার্মানির অধীনে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তখনও জার্মানি-ইতালি শক্তির সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি কেউই। অতএব যুদ্ধবন্দিদের উপর যে অকথ্য অত্যাচার চলেছিল সেকথা বলাই বাহুল্য। ঠিক এমনিভাবে ওয়ারস গেহটোতে বন্দি অবস্থায় আসতে থাকে অসংখ্য ইহুদি। কার্যত একটি ইহুদি বস্তিতেই পরিণত হয় ওয়ারস গেহটো। আর তার মধ্যেই হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে একটি রোগের প্রাদুর্ভাব। টাইফয়েড। আপাত অর্থে মারণ রোগের তকমা না পেলেও সেবারের মহামারীতে ১০ হাজারে বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন টাইফয়েডে। আর তার সঙ্গে অনাহার এবং অপুষ্টি তো ছিলই।
তবে ১৯৪০-৪১ সাল ধরে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়তে থাকলেও শেষে হাল ধরেন বন্দিদেরই একাংশ। তাঁরা যুদ্ধের আগে ছিলেন ডাক্তার। অবশ্য তখন হাতের কাছে না আছে ওষুধ, না আছে কোনো চিকিৎসা পরিকাঠামো। কাতারে কাতারে ইহুদি মারা গেলেও নাৎসি বাহিনীর কিছুই আসে যায় না। কিন্তু প্রতিবেশীকে মরতে দেখলে তো চুপ করে থাকা যায় না। আর যখন প্রত্যেকের ভাগ্যই আসলে এক সুতোয় বাঁধা। কিন্তু কী করেছিলেন সেদিন সেই ইহুদি চিকিৎসকরা? ৮০ বছর পর সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন অধ্যাপক লিউই স্টোন। জাদুঘরে সংরক্ষিত তথ্য থেকে মোটামুটি তার একটা রূপরেখাও তৈরি করেছেন তিনি।
অধ্যাপক স্টোনের বক্তব্য অনুযায়ী মহামারী রুখতে প্রথম শর্ত হল শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। সেইসঙ্গে পরিচ্ছন্নতা। যুদ্ধের পরিস্থিতিতে যখন ছোট্ট বস্তিতে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে মানুষকে, তখনও এই দুটি বিষয়েই জোর দিয়েছিলেন ইহুদি চিকিৎসকরা। আর তার ফলে মাঝপথেই আটকে দিয়েছিলেন মহামারীর প্রকোপ। ফলে অন্তত আরও ১০ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছিলেন। তবে হয়তো সেই বেঁচে যাওয়া ছিল সাময়িক। টাইফয়েডে মৃত্যু না হলেও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের অনেকেরই। তবে সেই ঘটনা থেকে আজকের মহামারী পরিস্থিতিতেও শিক্ষা নেওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন অধ্যাপক স্টোন। তাই প্রয়োজনীয় কাজ সারুন, কিন্তু শারীরিক দূরত্ব এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে তবেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অজানা মহামারীতে মৃত ৩৫০-এরও বেশি হাতি, ভয়াবহ পরিস্থিতি বতসোয়ানায়