সারা মাথায় প্রজাপতি আকৃতির নানা রঙের হেয়ার-ক্লিপ লাগানো। পোশাকে, এমনকি টেবিল টেনিস প্যাডেলেও সেই একই প্রজাপতি ছাপ। হুইল চেয়ারের গায়েও লাগানো একাধিক প্রজাপতির ছবি দেওয়া স্টিকার। নিজের মনের মধ্যে জমে থাকা মুক্তির স্বপ্নকে এভাবেই ব্যক্ত করেন তিনি। জাপান তথা সারা পৃথিবীর কাছে তিনি পরিচিত ‘বাটারফ্লাই লেডি’ নামেই। তিনি প্যারালিম্পিক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় কিমি বেশো। জীবনের একাধিক বিপর্যয় কাটিয়ে এসেও তিনি করোনা অতিমারী নিয়ে শঙ্কিত। অন্য কিছু না, নিঃসঙ্গ মৃত্যু চান না তিনি। তিনি চান জীবনের শেষ মুহূর্তেও, টেবিল টেনিসের ভাষায়, একটা স্ম্যাশ দিয়ে যেতে।
৭৩ বছরের এই খেলোয়াড় আজও টেনিস টেবিলের পাশে গিয়ে বসলে নিজের যৌবন ফিরে পান। তাঁর ব্যাটে ধাক্কা লেগে যখন বল ফিরে যায়, তাও যেন একটা মুক্ত প্রজাপতির মতোই পৌঁছে যায় প্রতিপক্ষের কাছে। জীবনের সবটাই এমন রঙিন এবং হাসিখুশি রাখতে চান বেশো। বারবার ফিরে যান শৈশবের দিনগুলিতে। যখন তাঁর পায়ে কোনো সমস্যা ছিল না। বাড়ি থেকে স্কুল যাওয়ার পথে লাফিয়ে লাফিয়ে পেরিয়ে যেতেন পাহাড়ি উপত্যকা। স্কুল থেকে আবার এক দৌড়ে বাড়ি। বরাবর ভীষণ ছটফটে ছিলেন বেশো।
সমস্যার মুখে পড়তে হল মধ্যবয়সে এসে। বেশোর স্বামী যখন মারা যান, তখন তাঁর বয়স ৩৭। এই বয়সে হঠাৎ এই দুর্ঘটনার ধাক্কা সামলে নিতে পারেননি তিনি। অবসাদের কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। প্রায় বছরখানেক পর যখন হাঁটাচলা করতে শুরু করলেন, তখনই অনুভব করেন, কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত প্রায়শই অসহ্য ব্যথা। ডাক্তার দেখাতেই ধরা পড়ল রোগ। ক্যানসার থাবা বসিয়েছে তাঁর ফিমারে। অপারেশনের পর ক্যানসার দূর হল। কিন্তু চিরকালের মতো হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেন বেশো। তবে তাতে তাঁকে বন্দি করে ফেলা যায়নি। কিছুদিনের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে শুরু করলেন শহরের নানা প্রান্তে। পা নেই তো কী হয়েছে, শুধু দুটো হাতের উপর ভরসা রেখেই চার চাকা এমনকি বাইক পর্যন্ত চালাতে শিখে গেলেন তিনি। আর নিজেকে ব্যস্ত রাখতে একটি ড্রাইভিং স্কুলে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের ড্রাইভিং শেখাতেও শুরু করলেন।
এই স্কুলের বাইরেই একবার এক পোস্টারে জানতে পারলেন প্যারালিম্পিকের বিষয়ে। ঠিক করে ফেললেন, এভাবেই টেনিস টেবিলের ধারে গিয়ে বসবেন তিনি। ব্যাটের জাদুতে পরাজিত করবেন প্রতিপক্ষকে। শুরু হয়ে গেল প্রস্তুতি। দীর্ঘ অনুশীলনের পর ৫৬ বছর বয়সে প্রথম প্যারালিম্পিকে জায়গা পেলেন তিনি। আর তারপর থেকেই শুরু জয়যাত্রা। এর মধ্যে ২০১৮ সালে দুটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তবু সেই ধাক্কা সামলে আবার ফিরে এসেছেন। লক্ষ ২০২০ সালের প্যারালিম্পিক। যদিও এখনও টোকিও প্যারালিম্পিকে তাঁর নাম নিশ্চিত নয়। তবে বেশো আশা করেন, তিনি ঠিকই জায়গা পাবেন।
আরও পড়ুন
অলিম্পিক বন্ধের দাবিতে লক্ষাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহ জাপানিদের
তবে এই অতিমারীর মধ্যে অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে অন্য অনেক খেলোয়াড়ের মতোই চিন্তিত তিনিও। যদিও জাপান সরকার থেকে জানানো হয়েছে, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে আগেই। একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির পক্ষ থেকেও। তবে জাপান ইতিমধ্যে অতিমারীর চতুর্থ তরঙ্গের শিকার। এই সময় প্রতিষেধক কতটা কাজ করবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত নন চিকিৎসকরাও। বেশো অবশ্য জানিয়েছেন, খেলার সুযোগ পেলে তিনি নিশ্চই খেলবেন। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি যেন সরকার ভেবে দেখেন। কোভিডের মতো নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয়তো কেউই চান না।
আরও পড়ুন
জীবিত মানুষের শরীর থেকে ফুসফুস প্রতিস্থাপন জাপানে, পৃথিবীতে প্রথম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষাক্ত জল ফেলা হবে সমুদ্রে, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত জাপানে