ধরুন, ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’ গানটি সার্চ করছেন ইউটিউবে। অনেক বাঙালি গায়ক-গায়িকার মুখের মাঝে, হঠাৎ ভেসে উঠল দুজন অবাঙালি মুখ। খানিক অবাক তো হবেনই! আর তাঁরা যদি সুদূর জাপানের মানুষ হন, তাহলে তো আপনার বিসময়ের অন্ত থাকবে না! তেমনই দু’জন জাপানি তরুণ-তরুণী শুনশুকে মিজোতোনে ও মায়ের ওয়াতানবে। গত আট বছর ধরে বাংলাদেশের বুকে দাঁড়িয়ে গেয়ে চলেছেন একের পর এক বাংলা গান।
২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসা এনজিও-র কাজের সূত্রে। তারপর বাংলার প্রেমে পড়া, বাংলা শেখা থেকে বাংলা গান বাঁধা - এক দীর্ঘ পথ। পুরোটাই যেন রূপকথার গল্প। আর সেই গল্পে রাজপুত্র-রাজকন্যা শুনশুকে ও মায়ের। ২০০৯-র পর, ফের ২০১২ সালে এই দুই তরুণ তরুণী আসেন বাংলাদেশে। থিতু হন পাকাপাকি ভাবে।
ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন একটি বাংলা ব্যান্ড। নাম দিয়েছে 'বাজনা বিট'। অদ্ভুত নাম তাই না? বাংলাদেশের 'ব' আর জাপানের 'জ' এই দুটি অক্ষরই এই নামকরণের মূল উদ্দেশ্য । আর 'বিট'? সেটি একটি জাপানি শব্দ, যার অর্থ মানুষ। বহু যুগ আগে বাংলারই এক সঙ্গীত সাধক লালন সাঁই মনের মানুষের খোঁজে একের পর এক গান বেঁধে গিয়েছিলেন। শুনশুকে আর মায়েরও কি সেই মনের মানুষেরই খোঁজে?
প্রথম দিকে এই দুই তরুণ তরুণী প্রচলিত বাংলা গানই গাইতেন। যেমন ‘আমরা করব জয়’, ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ ইত্যাদি। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁরা বাংলায় স্বরচিত গান তৈরি করে ফেলেছেন। গানগুলি জনপ্রিয়ও হয়েছে। তাঁরা চান, তাঁদের গানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে মৈত্রী বন্ধন গড়ে উঠুক। একটা ভাষার প্রতি অফুরান ভালোবাসা না থাকলে সেই ভাষায় গান লিখে ফেলা অসম্ভব। শুনশুকে আর মায়েরের গান তাদের বাংলার প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসারই পরিচয় দেয়।
মায়ের-এর কথায়, তাঁরা শুধু বাংলা ভাষা নয়, বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতিতেও মজেছেন। বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়ে দেওয়ার মানসিকতা শুনশুকে ও মায়েরকে গভীর ভাবে আকর্ষণ করেছে।
তাঁদের এই ব্যতিক্রমী কাজটি আগামী দিনেও সুন্দর ভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন তাঁরা, আশা এটুকুই। বিশেষত এমন একটি সময়ে, যখন খোদ বাঙালিরাই বাংলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সেখানে এমন উদাহরণ অবশ্যই অনুপ্রেরণা যোগায় আমাদের।