পিছিয়ে গেছে অলিম্পিক, ডেলিভারি বয়ের কাজ করছেন জাপানের অলিম্পিয়ান!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথমবার। করোনা মহামারীর জেরে পিছিয়ে গিয়েছে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা। এই অভূতপূর্ব ঘটনায় আশাহত বিশ্বের বহু ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। আর অলিম্পিকের প্রতিযোগীরা? তাঁদের কাছে তো এটা জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন। এইসব প্রতিযোগীদের অনেকের খবরই আমরা রাখি না। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন বিকল্প জীবিকার খোঁজ, কারোর বা এখন রোজগার একেবারেই শূন্য।

জাপানের ফেন্সার রিও মিয়াকের কথাই ধরা যেতে পারে। প্রস্তাবিত সময় মেনে জুলাই মাসে অলিম্পিক শুরু হলে এখন হয়তো তাঁকে দেখা যেত তলোয়ার হাতে অনুশীলন করতে। অন্য সময় অবশ্য তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করেন রিও। তবে মহামারীর প্রকোপে এই দুইয়ের সুযোগই এখন বন্ধ। ফেন্সিং এমন একটি খেলা, যে শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া তা খেলা যায় না। ফলে প্রশিক্ষণের বা অনুশীলনের কোনো সুযোগ এখন নেই। তাঁর অলিম্পিক প্রতিযোগিতার স্পনসররা অবশ্য এই সময়ের ব্যয় বহন করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কিন্তু প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকায় সেই আর্থিক সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছেন রিও।

রিও মিয়াক এমন একটি কাজ খুঁজছিলেন, যাতে রোজগারের সুযোগও হবে আবার শরীরের ফিটনেস বজায় রাখার কাজটাও হবে। লকডাউনের ফলে শহরের সমস্ত জিম বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে তিনি বেছে নিয়েছেন হোম ডেলিভারির খাবার সরবরাহের কাজ। উবের কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে যোগ দিয়েছেন রিও। ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার পৌঁছে দেন তাঁদের বাড়িতে। প্রতিদিন দীর্ঘ পথ সাইকেল ভ্রমণের ফলে শরীরে যথেষ্ট ব্যায়াম হয়। রোজগার অবশ্য বেশ কম। একজন বিশ্বমানের অ্যাথলিটের বর্তমান দৈনিক আয় মাত্র ২ হাজার ইয়েন বা ১৮ ডলারের কিছু বেশি। তবে এই রোজগারেও তাঁর মোটামুটি চলে যায় বলে জানিয়েছেন রিও। অন্তত তাঁর ব্যাঙ্কের সঞ্চয়ের উপর তো হাত দিতে হচ্ছে না।

২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে রৌপ্যপদকজয়ী ফেনসার রিও মিয়াক। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি নিঃসন্দেহে একজন তারকা। সেই তারকা মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহ করছেন, এমন দৃশ্য দেখলে অবশ্য থমকে থামতেই হয়। তবে কোনো কাজেরই বোধহয় উচ্চ-নিচ বিভাজন থাকে না। বরং এই কাজের ফলে যদি তাঁর শারীরিক সামর্থ্য বজায় থাকে, তবে সেটাই হবে আশার কথা। লকডাউনের পর তাঁকে আবার তলোয়ার হাতে দেখার অপেক্ষায় থাকব আমরা। পরবর্তী অলিম্পিকে তাঁর পারফরমেন্স আবারও মুগ্ধ করুক সমস্ত দর্শককে।

More From Author See More