কথায় আছে যুদ্ধ আর প্রেমের জন্য সব কিছু করাই সম্ভব। মেসেজ হোক কিংবা রক্ত দিয়ে চিঠি— ভালোবাসার কথা জানাতে এসব তরিখা দেখা যায় হামেশাই। চলচ্চিত্রের পর্দায় মোমবাতির আলো দিয়ে প্রেমের প্রস্তাবের কথা ফুটিয়ে তোলার দৃশ্যও আমাদের অতিপরিচিত। তবে জাপানি শিল্পী ইয়াসুসি ইয়াসান তাকাহাসির (Yasushi ‘Yassan’ Takahashi) কাছে হার মানতে বাধ্য সব কিছুই। এমনকি তাঁর বিবাহপ্রস্তাব দেওয়ার অভিনব কর্মকাণ্ডকে বছর দুয়েক আগে সম্মান জানিয়েছিল খোদ গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড (Guinness Book Of World Records)!
কিন্তু কী এমন করেছিলেন তাকাহাসি? পেশাগতভাবে তাকাহাসি একজন জিপিএস আর্টিস্ট। বিগত দশকের শুরু থেকেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই অভিনব শিল্পকলাটি (GPS Art)। রং-তুলি কিংবা ক্যানভাস নয়, বরং এই চিত্রশিল্পে শিল্পীই চিত্রাঙ্কনের মূল যন্ত্র। শুধু তাঁর কাছে থাকতে হবে একটি জিপিএস ট্র্যাকার। ব্যাপারটা কেমন? গুগল আর্থ খুলে জিপিএস ট্র্যাকার অন করে হাঁটা লাগালেই, সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনটিতে ফুটে ওঠে যাত্রাপথের ছবি। ফলত, কোনো ছবি আঁকার জন্য আগে থেকে পথ নির্ধারণ করে নিতে হয় শিল্পীকে।
ক্যান্ডেল লাইট ডিনার কিংবা হাঁটু মুড়ে প্রোপোজ করায় তাকাহাসির আস্থা ছিল না কোনোদিনই। বরং, বিবাহের প্রস্তাব দিতে অভিনব শিল্পটিকেই হাতিয়ার করে নেন জাপানি যুবক। পৃথিবীর মানচিত্রের বুকে ফুটিয়ে তোলেন অভিপ্রেত শব্দরাশি। তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই কাজ। বা, বলা ভালো তাকাহাসি নিজেই বেশ কঠিন করে তুলেছিলেন এই চ্যালেঞ্জকে। ১১ বছরের পুরনো প্রেমিকাকে বিবাহের প্রস্তাব দিতে রুকস্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন তাকাহাসি। অতিক্রম করেন ৭১৬৩.৭ কিলোমিটার পথ। আর সেটা পায়ে হেঁটেই।
মানচিত্র খুলে দেখলে রীতিমতো তাজ্জব হয়ে যেতে হয় তাকাহাসির এই কীর্তি। জাপানের একেবারে দক্ষিণে হোক্কাইডো থেকে শুরু করে উত্তরের কাগোশিমা সমুদ্রতট পর্যন্ত হাঁটা মুখের কথা নয় একেবারেই। সব থেকে বড়ো কথা পার্বত্য জাপানে পদব্রজে অভিপ্রেত শব্দ ফুটিয়ে তোলাই কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। তবে ৬ মাসের অক্লান্ত চেষ্টা এবং কয়েক বছরের পরিকল্পনায় সেই অসাধ্যটাই সম্ভব করে দেখান তাকাহাসি। ফুটিয়ে তোলেন ‘ম্যারি মি’ শব্দবন্ধ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রেয়সীর থেকে কী উত্তর পেয়েছিলেন তিনি? প্রাথমিকভাবে তাকাহাসির থেকে এই উপহার পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্কুলের সহপাঠী তথা প্রেমিকা নাটসুকি। এমন প্রস্তাব ফেরানোর সাধ্যই বা কার? ফেরাননি নাটসুকিও। চোখ বন্ধ করেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন জাপানি তরুণের সঙ্গে বাকি জীবন কাটাতে।
তাকাহাসির এই কীর্তি সেসময় রীতিমতো ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। আর তারপরেই তাঁকে স্বীকৃতি জানায় খোদ গিনেস বুক সংস্থা। আজও বিশ্বের বৃহত্তম জিপিএস ড্রইং হিসাবেই রেকর্ড ধরে রেখেছে তাকাহাসির বিবাহপ্রস্তাব। প্রেমের জন্য এহেন কৃতিত্ব বোধ হয় এই বিশ্বের আর কারোরই নেই…
Powered by Froala Editor