যে বনে আত্মহত্যা করতে ছুটে আসেন পর্যটকরা

জাপানে, ফুজিয়ামা পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে 'আওকিহাগারা'। দুর্ভেদ্য জঙ্গল। থামের মতো গুঁড়ি আড়াল করে আলো। মখমলে শ্যাওলায় ঢাকা মাটি। দিনের বেলাতেও গা ছমছম করে উঠবে যে কারোর। সাহসী দু একজন, কখনোসখনো সাধ করে ঢুকেছেন জঙ্গলে। লতাগুল্ম সরিয়ে পিছিয়ে এসেছেন ভয়ে। বীভৎস দৃশ্য। গাছের ডাল থেকে ঝুলে পড়ছে নরকঙ্কাল… সবুজ মাটিতে মিশে আছে কোনো হতভাগ্যের দেহাংশ…

'আত্মহত্যার বন ' অথবা 'সুইসাইড ফরেস্ট' বলে খ্যাত 'আওকিহাগারার জঙ্গল'। এমনিতেই জাপানিরা খানিক আত্মহত্যাপ্রবণ। প্রত্যেক বছর গড়ে আড়াই হাজার মানুষ নিজের জীবন শেষ করে দেন নিজের হাতে। তার মধ্যে প্রায় ৭০ থেকে ১০০ জনের দেহ মেলে জঙ্গলে।

কেন এখানেই? ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় অনায়াসে। বৈদ্যুতিন যন্ত্র হয়ে পড়ে অকেজো। 'শুভ কাজ' সম্পন্ন করতে আর কোনো বাধা থাকে না।

আওকিহাগারাকে ঘিরে নানা গল্প রয়েছে। জাপানি লোককথায় পাওয়া যাবে, কুখ্যাত 'উবাসুতে' প্রথার কথা। 'উবা-সুতে' অর্থাৎ 'বৃদ্ধা'-পরিত্যাগ। আর্থিক অনটনের কারণে পরিবারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ছেড়ে দেওয়া হত জঙ্গলে। অনাহারে-তেষ্টায় শুকিয়ে মরত মানুষগুলো। লাশ ছিঁড়ে-খুবলে খেত জংলি পশু। সেই থেকে অতৃপ্ত আত্মারা নাকি বাসা বাঁধছে কোটরে। জঙ্গলে ঢুকলেই ভর করবে 'আয়াকাশি' বা রাক্ষস। ভুলভুলাইয়ায় ঠোক্কর খেতে থাকা তৃষ্ণার্ত পথিকের কাছে তখন মুক্তির উপায় বলতে গাছের ঝুরি।

১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল সেইচো মাৎসুমতোর উপন্যাস 'কুরোই জুকাই'। গল্পের নায়িকা জীবনের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এই জঙ্গলে। সেই থেকে নাকি আত্মহত্যাকারীদের প্রিয় জায়গা।

অনেকেই অবশ্য ফুজিয়ামা পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। ছোট ছোট গুহা-জলপ্রপাত-পাখপাখালি-কিচিরমিচিরের মাঝে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন। তবে বেশিদিন টিকতে পারেন না কেউই। আওকিহাগারার নিঃঝুম পরিবেশ মনকে বিষণ্ন করে তোলে আরও।

প্রকৃতি কি সত্যিই জীবনের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে পারে? উত্তর আসবে না হয়তো।