বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে সারাজীবন একান্তভাবে কাজ করেছেন তিনি। সিনেমার শাশ্বত ক্ষমতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন যুদ্ধের আতঙ্ককে। সম্প্রতি ‘Labyrinth of Cinema’ চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছিলেন নিজেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামল সেই লড়াইও। নোবুহিকো ওবায়াসি, জাপানের অন্যতম চলচ্চিত্রকার এবং চিত্র পরিচালক, চলে গেলেন গতকাল।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। চলছিল চিকিৎসাও। ২০১৬-য় চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তাঁর হাতে আর কয়েকমাস সময় রয়েছে হয়তো। কিন্তু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েননি তিনি। বরং শারীরিক যন্ত্রণাকে পাশ কাটিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই চালিয়ে গেছেন নিজের কাজ।
‘Labyrinth of Cinema’ চলচ্চিত্রটির আনুষ্ঠানিক মুক্তির কথা ছিল গতকালই। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায়, লকডাউনের জেরে, পিছানো হয়েছিল প্রকাশের দিন। গতবছর টোকিও আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল সিনেমাটি। পাশাপাশি দেখানো হয়েছিল তাঁর অন্যান্য নানা কাজ-ও। উল্লেখ্য, তাঁকে ‘সিনেমাটিক ম্যাজিশিয়ান’ সম্মান দিয়েছিল টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
নোবুহিকোর ঝুলিতে রয়েছে ৪০টির বেশি সিনেমা, প্রায় হাজারের মতো টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং অনেক বাণিজ্যিক ও অন্যান্য ভিডিও। সারাজীবন সিনেমার মধ্যে দিয়ে শান্তির বার্তা এবং কঠিন সত্য সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তিনি।
জাপানী টেলিভিশনে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রবর্তক তিনিই। তাঁর দৌলতেই চার্লস ব্রনসন, ক্যাথেরিন ডেনিউভে-সহ একাধিক বিদেশি তারকা কাজ করেছেন জাপানে। যা জাপানের যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের আধুনিকরণের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
১৯৮৫ সালে মুক্তি পায় তাঁর ‘Miss Lonely’ সিনেমাটি। চলচিত্রটির শুটিং হয়েছিল সমুদ্র তীরবর্তী হিরোশিমা শহরের ওনিমিচিতে। উল্লেখ্য, সেখানেই বড়ো হয়ে উঠেছেন তিনি। বানিয়েছিলেন হাতে গড়া অ্যানিমেশন। চিরবিশ্বাসী ছিলেন সিনেমার ক্ষমতায়। জীবনে একাধিকবার বলেছেন, সিনেমা স্বাধীনতার কথা বলতে পারে।
জাপান তথা বিশ্বের সিনেমাজগতে ওবায়াসির কাজ আজীবন নিদর্শন হয়ে থাকবে, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। তাঁর মৃত্যুসংবাদে শোকস্তব্ধ পুরো দেশ। ইতিমধ্যেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাপানি মিডিয়া একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তবে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিস্তরে জানানো হয়নি কোনো তথ্যই। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে জমায়েত না করতে আর্জি জানিয়েছে জাপান সরকার।