‘জন্মিলে মরিতে হবে’- এই ধ্রুব সত্যটি নিয়েই চলতে হয় আমাদের। কিন্তু এই জন্ম আর মৃত্যু বড় অদ্ভুত জিনিস। পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের এই যাওয়া-আসার সময়টা একই দিনে। বড় অদ্ভুত তো বটেই। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি জন্মালেন এমন একটি দিনে, যা প্রতি চার বছর অন্তর একবার আসে। আবার ওই দিনেই মারা গেলেন। ব্যাপারটা আরও অদ্ভুত না? পৃথিবীতে এমন ঘটনারই সাক্ষী থেকেছে একজন মানুষ, স্যার জেমস মিলনে উইলসন। ২৯ ফেব্রুয়ারি, লিপ ইয়ারের এই বিশেষ দিনেই তিনি জন্মেছিলেন। আবার মারাও গিয়েছিলেন এই দিনেই।
তাসমানিয়ার এক্সিকিউটিভ গভর্নমেন্টের প্রধান ছিলেন একসময়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক জীবন শুরুর আগে ছিলেন একজন জাহাজ ব্যবসায়ী। অবশ্য জেমস উইলসনের পরিবারেও এই ব্যবসার ছোঁয়া ছিল। ১৮১২ সালে স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া জেমস একসময় দেশ ছাড়েন। চলে আসেন তাসমানিয়ায়। পরবর্তীকালে ওশিয়ানিয়ার এই দেশই ছিল তাঁর শিক্ষা ও কর্মস্থল।
অবশ্য তখন শুধু জাহাজেই কাজ করতেন এমনটা নয়। অস্ট্রেলিয়া ও তাসমানিয়ায় বেশ কিছু প্রদর্শনীরও আয়োজন করেছিলেন তিনি। তখনকার দিনের স্থানীয় সংবাদপত্রে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বলা হয়, এই প্রদর্শনীগুলোও তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অনুঘটক ছিল। ১৮৫৯ সালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। সেই বছরেই লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হন। এর ঠিক দশ বছর পর, ১৮৬৯ সালে তাসমানিয়ার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। দীর্ঘ চার বছর সেই পদে ছিলেন তিনি। সেই সময়ই জনগণের মধ্যে রাজনীতিবিদ হিসেবে জনপ্রিয় হন তিনি। এর মূলে অবশ্য ছিল তাঁর কাজ। এরপরেও, ১৮৭২ সালে তাসমানিয়ার লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। আমৃত্যু সেই পদেই ছিলেন স্যার জেমস উইলসন।
জন্মেছিলেন একটি লিপ ডে-তে। মৃত্যুও হল সেইদিন। ১৮৮০-এর ২৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। এরকম ‘বিরল সম্মান’ আর কেউ পেয়েছেন কিনা জানা নেই। কিন্তু সমস্যায় পড়েন বাকিরা। জেমস উইলসনের বয়স ঠিক কত? হিসেব তো বলছে ৬৮। কিন্তু যদি ২৯ ফেব্রুয়ারি ধরেই হিসেব কোর্টে হয়, তাহলে যে বয়স দাঁড়াচ্ছে ১৭! এইভাবেই দুটো ‘বয়স’ নিয়ে ইতিহাসের পাতায় বেঁচে আছেন স্যার জেমস মিলনে উইলসন। এরম স্বীকৃতি আর কজন পায়…
Powered by Froala Editor