চাল-ডাল-সবজি মিশিয়ে এক মাখোমাখো খাবার। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে খিচুড়ি নিয়েই। সরস্বতী পুজো কিংবা বর্ষাদিনে খিচুড়িই মহাভোগ্য হয়ে ওঠে বাঙালির পাতে। তবে শুধুই কি বাংলা? গোটা ভারতজুড়েই আদিকাল থেকে চল রয়েছে খিচুড়ির। স্থান বিশেষে বদলে যায় খিচুড়ির রন্ধনপ্রণালী এবং তার স্বাদ। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচলিত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খিচুড়ি তৈরির পদ্ধতিকেই দুই মলাটের মধ্যে বন্দি করেছেন জয়পুরের দুই বোন।
রাতিকা ভার্গব এবং রিচা খেতান। জয়পুরের (Jaipur) এই দুই ফুড কনসাল্ট্যান্ট নেট দুনিয়ায় পরিচিত ‘কল্ড্রনসিস্টার্স’ (Cauldron Sisters) নামে। হ্যাঁ, এই নামেই ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তাঁদের। ২০১৫ সাল থেকে সেখানেই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী পদের রন্ধনপ্রণালীর প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই সেই তালিকায় ছিল খিচুড়িও।
সেনাদের পুষ্টি সরবরাহ করতে যেভাবে জন্ম হয়েছিল বিরিয়ানির, ঠিক এই একই উদ্দেশ্যে প্রাচীন ভারতের দরিদ্র কৃষক পরিবারে চল ছিল খিচুড়ির। সংস্কৃত শব্দ ‘খিচা’ থেকেই জন্ম খিচড়ি বা খিচুড়ি নামটির। যার মূল অর্থ চাল ও সবজির মিশ্রণ। ফলে, এমন একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারের ডকুমেন্টেশন যে জরুরি, তা আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। লকডাউন চলাকালীন, রাতিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেন জয়পুরের এক স্কুল-শিক্ষিকা। আবেদন জানান, খিচুড়ির ইতিবৃত্তান্ত এবং ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতির খিচুড়ি তৈরির প্রণালী নিয়ে আস্ত একটি গ্রন্থরচনার।
হ্যাঁ, এই কাজ প্রায়-অসম্ভব হলেও, সাধ্যমতো চেষ্টা করেই ভারতের খিচুড়ি-মানচিত্র প্রস্তুত করেছিলেন রাতিকা ও রিচা। গবেষণায় অন্ত ছিল না। কাশ্মীর থেকে শুরু করে কেরল, রাজস্থান থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ— দেশের বিভিন্নপ্রান্তের প্রায় ৪০ ধরনের বেশি খিচুড়ি তৈরির পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করেছিলেন কল্ড্রনসিস্টার্স। ২০২১ সালের শেষ দিকে প্রকাশ্যে এসেছিল সেই বই। এবার বই বিক্রির সমস্ত টাকাই এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিলেন তাঁরা। তবে এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় খাবারের ঐতিহ্য এবং ইতিহাস রক্ষায় আগামীতেও অভিনব প্রকল্প নিয়ে হাজির হচ্ছেন বলেই জানাচ্ছেন জয়পুরের দুই তরুণী…
Powered by Froala Editor