জল, স্থল, অন্তরীক্ষ— বিশ্বের সর্বত্রই থাবা বসিয়েছে প্লাস্টিক দূষণ। পৃথিবীর গভীরতম অঞ্চল মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে শুরু করে এভারেস্ট— মাইক্রোপ্লাস্টিক পৌঁছেছে দুর্গম অঞ্চলগুলিতেও। ভারতের মতো দেশে এই প্লাস্টিক দূষণের বাড়বাড়ন্তের কারণে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন ফুটপ্রিন্টের মাত্রাও। কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণে আদৌ কি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার? পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার তাই মাঠে নামল জয়পুরের ১৬ বছর বয়সী কিশোরী। রাজস্থানের বাসিন্দা আদিশ্রী কাস্লিওয়ালই (Adishree Kasliwal) এখন ভারতকে পথ দেখাচ্ছে, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের (Reuse Of Plastic)।
আজ থেকে বছর দুয়েক আগের কথা। তখন সবেমাত্র ভারতজুড়ে ঘোষিত হয়েছে লকডাউন। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, হাতের মুঠোয় অফুরন্ত সময় পেয়ে যায় আদিশ্রী। শুরু হয় পরিবেশকে সুস্থ করে তোলার পরিকল্পনা। বাড়িতে বসেই আদিশ্রী তৈরি করে ফেলে অভিনব এক প্রতিষ্ঠান— টিম আর্থ। প্রাথমিকভাবে যার লক্ষ্য ছিল, তরুণ প্রজন্মকে প্লাস্টিক দূষণ এবং তার প্রভাবের সম্পর্কে সচেতন করা। ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের প্লাস্টিক দূষণ এবং তার প্রতিকারের সম্পর্কে ক্লাস নেওয়া শুরু করে আদিশ্রী। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে উঠে এসেছিল প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের প্রসঙ্গও। কিন্তু ঘরে বসে যে, এমন একটি প্রকল্পকে বাস্তবের রূপ দেওয়া অসম্ভব। ফলে, আরও কিছুদিনের অপেক্ষা।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোভিড বিধি খানিকটা শিথিল হলে কোমর বেঁধে মাঠে নামে আদিশ্রীর টিম আর্থ। জয়পুর শহরে শুরু হয় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। মূলত প্লাস্টিকের বোতল এবং প্লাস্টিকের তৈরি মোড়ক সংগ্রহ করে আদিশ্রীর সহকর্মীরা। রাসায়নিকের ব্যবহারে সেই প্লাস্টিক গলিয়ে তৈরি করে ফেলা হয় প্লাস্টিকের ইট। তা দিয়ে টুল, চেয়ার, টেবিল-সহ একাধিক দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রী তৈরি করছে টিম আর্থ। প্লাস্টিকের তৈরি হলেও, এইসব সামগ্রী একক ব্যবহারযোগ্য না হওয়ায় তাতে দূষণের সম্ভাবনা অনেকটাই কম। এমনটাই অভিমত আদিশ্রীর। পাশাপাশি, বৃক্ষরোপণ এবং বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে তার সংস্থা ‘টিম আর্থ’।
তবে শুধু জয়পুরই নয়, ভারতের বিভিন্নপ্রান্ত এমনকি পশ্চিমের দেশ থেকেও বহু কিশোর-কিশোরী সামিল হয়েছে আদিশ্রীর এই লড়াইয়ে। কিছুদিন আগে ইউনিসেফের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ ওয়েব সিরিজে কনিষ্ঠতম বক্তা হিসাবেও বক্তৃতা রেখেছে ভারতীয় কিশোরীটি।
আরও পড়ুন
প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে দৈত্যাকার গ্লোব তৈরি জেরুজালেমের শিল্পীর
পরিসংখ্যান বলছে বিগত এক বছরে ভারতে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২১.৮ শতাংশ। অর্থাৎ, আগামী ৫ বছরের মধ্যেই প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ পৌঁছাবে দ্বিগুণে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আদিশ্রীর এই উদ্যোগই যেন আশার আলো দেখাচ্ছে ভারতকে। এখন দেখার, এই সমস্যা সমাধানে আদিশ্রীর দেখানো পথে ভারত সরকার এগিয়ে আসে কিনা…
আরও পড়ুন
২ বছরে ৭০০ কেজি প্লাস্টিক অপসারণ গুজরাটের তরুণীর
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
উপকূলবর্তী প্রাণীদের ‘পরিবহন’-এর মাধ্যম হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক বর্জ্যই