কার গলায় কতটা জাদু আছে, তা মঞ্চে অথবা রেকর্ডে না বাজলে আমরা হয়ত জানতে পারি না। কিন্তু আপন মনে গান গাইতে গাইতেও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ গায়ক হয়ে ওঠেন। কারও কারও গলার সুর যেন ঈশ্বরপ্রদত্ত। বেশ কিছুদিন আগেই রানাঘাটের রাণু মণ্ডলের গান নিয়ে তোলপাড় হয়েছে বলিউড থেকে সোশ্যাল মিডিয়া। সম্প্রতি বাংলাদেশের ঢাকার এক রিক্সাচালকের গান শুনে চমকিত দুই বাংলা। ইতিমধ্যে রাস্তায় রিক্সা থামিয়ে তাঁর গান গেয়ে বেড়ানোর ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে ডাকও পেয়েছেন তিনি।
আজম খান থেকে মান্না দে যে কোনো শিল্পীর গান হুবহু নিজের গলায় মেলে ধরেন ঢাকার জহরুল ইসলাম। পেশায় তিনি রিক্সাচালক। রিক্সা চালাতে চালাতে আপনমনে গান গেয়েছেন এর আগেও, কিন্তু খেয়াল করেননি অনেক যাত্রীই। কোথাও গানের অনুষ্ঠান চললে রিক্সা দাঁড় করিয়ে সেখানে যোগ দিয়েছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই গানের ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ ছিল প্রবল। যেন তাঁর গলার ভেতর জন্মের পর থেকেই ঈশ্বর সুর ঢেলে দিয়েছেন। আর তাঁর এই ঘুরে ফিরে গান গাওয়ার দৃশ্য বস্তুত এখন ভাইরাল নেট দুনিয়ায়।
একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই বিখ্যাত হওয়ার ঘটনা কিছুই জানতেন না। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার খবর শুনে জহরুল আপ্লুত ও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
চারবছর আগে সিরাজগঞ্জ থেকে দারিদ্রের কারণে ঢাকায় চলে আসেন। আর তাতেই হয়ত ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় জহরুলের। ক্ষুদ্র ঋণের দায়ে তিনি তাঁত বোনার চাকরিটি খোয়ান। কিন্তু দমে যাননি নিজেকে খুশি রাখতে, তাই উদার গলায় তাঁর গলা থেকে বেরিয়েছে বিখ্যাত শিল্পীদের গান। এখন, ঢাকার রাস্তায় নাম বললেই যে কেউ চিনে যাবেন তাঁকে।
আসলে গান এমন এক মাধ্যম যা মানুষকে মানুষের সাথে মিলিয়ে দেয়। গানের কোনো সীমা নেই, কিন্তু প্রতিভা হয়ত সবার থাকে না। আবার প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে পারেননা অনেকেই। দারিদ্রের কারণেও তিনি যে গান ছাড়েননি, বরং গানই তাঁর সমস্ত দুঃখ-যন্ত্রণাকে ভুলিয়ে দিতে পেরেছে, তার প্রমাণ এই ঘটনা।