খুব সম্প্রতি গ্রেটা থানবার্গের একটি বক্তৃতা প্রায় সবারই নজরে এসেছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে পরিবেশ নিয়ে তার এই আন্দোলন সমস্ত পক্ষের সমর্থন কুড়িয়েছে। কিন্তু এই সবকিছুর আগে আরও একজন নিঃশব্দে শুরু করেছিলেন পরিবেশ বাঁচানোর কাজ। শুরু করেছিলেন সেই ১৬ বছর বয়সেই। তিনি, যাদব 'মোলাই' পায়েং।
সালটা ১৯৭৯। ১৬ বছরের কিশোর যাদব পায়েং লক্ষ্য করেন, বন্যার ফলে এলাকার সাপের একটা বড় অংশ রাতারাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। না, ভেসে যায়নি। বন্যার পরে অত্যাধিক গরমে মারা যায় সাপগুলো। বন্যার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় বিপুল পরিমাণে গাছ কাটাকে। যার ফলে উপকূলের বালু অঞ্চল একেবারে ন্যাড়া হয়ে পড়ে। তখন থেকেই শুরু হয় যাদব পায়েংয়ের কাজ। সেই ১৬ বছর বয়সেই যেন ভবিষ্যতটা দেখতে পেলেন তিনি। তাঁর এলাকার কাছাকাছি বালুতটে, নিজেই উদ্যোগ নিয়ে লাগালেন ২০টি বাঁশচারা। ঠিক সেই সময়ই আসামের গোলাঘাট জেলায় প্রায় ২০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে গাছ লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়। কিশোর যাদব সেই দলের সঙ্গে যুক্ত হন। গাছ লাগানোর 'নেশা' পেয়ে বসেছে তখন তাঁকে। তাই পাঁচ বছর পর ওই কাজটি শেষ হয়ে গেলেও, থেমে থাকেননি যাদব পায়েং। এখনও থামতে শেখেননি তিনি। তাঁর একার চেষ্টায়, পরিশ্রমে, পরিচর্যায় গাছগুলি বেড়ে উঠতে থাকে। সেই ২০০ হেক্টর জায়গাটা পরিণত হয় প্রায় ৫৫০ হেক্টর বড় একটা বনে। অর্জুন, করই, গুলমোহর, মোজ— নানা জাতের গাছের দেখা মেলে সেখানে। তবে শুধু গাছেই সীমাবদ্ধ নেই 'মোলাই ফরেস্ট'। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, একশৃঙ্গ গণ্ডার, হরিণ এবং আরও বিভিন্ন প্রাণীর বসবাস এই বনে। এমনকি, প্রায় ১০০টি হাতির একটি দলও নিয়মিত যাতায়াত করে এখানে। এই বনটা তাদেরও ভরসার জায়গা।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে বেশ কিছু সম্মান পেয়েছেন যাদব পায়েং। ২০১৫ সালে ভারত সরকারের তরফ থেকে পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। পরিবেশ আন্দোলনের ভিড়ে তাঁর কথা কখনই এড়িয়ে যেতে পারি না আমরা। কিন্তু আমরা, ভারতীয়রা কতটুকু মনে রেখেছি তাঁকে? শুধু মনে রাখাই নয়, কতটুকুই বা হাঁটতে পেরেছি তাঁর পথে? একটা সময় তাঁর নিজেরই তৈরি করা বনের বাঘ এসে তাঁর গরু, মোষ খেয়ে যায়। এর জন্য প্রতিবার তিনি দায়ী করেছেন আমাদের লোভকে। ক্রমাগত বনজঙ্গল কেটে বসতি বানানোর 'উন্নয়ন'কে। গ্রেটা থানবার্গের পাশাপাশি থাকুক আমাদের যাদব পায়েং। পাশে থাকুক আমাদের শুভবুদ্ধির আশা।