হারাতে বসেছে কিশোরগঞ্জের রাংসা অরণ্য, উদাসীন প্রশাসন

চারিদিকে থইথই করছে জল। তার মধ্যেই ভেসে রয়েছে আস্ত এক বনভূমি। কিশোরগঞ্জের ইটনার রাংসা (Itnar Rangsa) অরণ্য তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত। কিন্তু ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে সেই সৌন্দর্যও। মানুষের সীমাহীন লোভ গিলে খাচ্ছে প্রকৃতিকে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলেই অভিযোগ তাঁদের।

বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় উপজেলায় অবস্থিত এই ইটনার রাংসা। কয়েক দশক আগেও সেখানে অরণ্যের আয়তন ছিল প্রায় ২ হাজার একর। বর্ষার সময় নদীর জল কূল ছাপিয়ে উঠলে তার মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলি দেখে রীতিমতো মুগ্ধ হতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকি আশেপাশের নানা জেলা থেকেও এই অরণ্যের টানে ছুটে আসতেন মানুষ। কিন্তু এই দৃশ্যটাই বদলে যেতে শুরু করেছে বিগত কয়েক বছরে। অবাধে গাছকাটা চলছে ইটনার রাংসায়। অরণ্য সাফাই করে সেখানে কৃষিকাজও শুরু করেছে মানুষ। আর কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশকের জেরে বাকি গাছেদের অবস্থাও বিপজ্জনক।

স্থানীয় মানুষদের মতে, ২ হাজার একরের অরণ্যের আয়তন বর্তমানে ৭০০-৮০০ একরে নেমে এসেছে। তবে সেখানেও গাছের সংখ্যা রীতিমতো কম। বহু প্রাচীন উদ্ভিদের প্রজাতি একেবারেই হারিয়ে গিয়েছে ইটনার রাংসা থেকে, এমনটা আশঙ্কা করছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। এই বিষয়ে বনবিভাগে একাধিকবার অভিযোগ জানানোর পরেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকারি খাস জমিতে অবস্থিত এই অরণ্য। অথচ তা বনবিভাগের এক্তিয়ারের বাইরে। এমনটাই দাবি বনকর্তাদের। ফলে ইচ্ছা থাকলেও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে। অন্যদিকে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্রমশ নিজেদের আবাদভূমি বানিয়ে তুলছেন এই অরণ্যকে। একমাত্র জেলা প্রশাসনের উদ্যোগই পুরো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। তবে এতদিন ধরে সেদিক থেকেও কোনো সদর্থক সাড়া মেলেনি। কিশোরগঞ্জ জেলার নতুন জেলা প্রশাসক মোহম্মদ সামীম আলম অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি এতদিন এই অরণ্যের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। সম্প্রতি এলাকাবাসীরা তাঁকে বিষয়টি জানিয়েছেন। অরণ্য রক্ষার বিষয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। তবে ইতিমধ্যে যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তা কি আদৌ পূরণ করা সম্ভব হবে?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
২৫০ বছর পর উপজাতিদের হাতে ফিরছে অরণ্যের অধিকার