একখণ্ড লোহা কিছুদিন রেখে দিলেই তার উপর মরচে পড়ে যায়। পৃথিবীতে এমন ঘটনা হামেশাই ঘটছে। আর আমরা জানি এর জন্য প্রয়োজন জল এবং হাওয়া। বাতাসের অক্সিজেন এবং জলের সংস্পর্শে লোহা জারিত হয়ে মরচেয় পরিণত হয়। কিন্তু যেখানে জল বা বাতাসের প্রায় কোনো উপস্থিতি নেই? ধরা যাক চন্দ্রপৃষ্ঠের কথা। কিন্তু বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ সেখানেও মরচের উপস্থিতি খুঁজে পেল। আর স্বাভাবিকভাবেই এই নতুন আবিষ্কারকে ঘিরে দানা বেঁধেছে একঝাঁক রহস্য।
চাঁদের মাটিতে মরচের সন্ধান দিয়েছে ভারতেরই কৃত্রিম উপগ্রহ চন্দ্রযান-১। তার মধ্যে থাকা নাসার তৈরি এম৩ যন্ত্র ইতিমধ্যে নানা ধরনের পদার্থ, বিশেষত ধাতু, শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান হল জলের উপস্থিতি। হ্যাঁ, চন্দ্রযানের অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে চাঁদ একেবারে শুষ্ক নয়। তাতে জল আছে। কিন্তু সেই জল আছে মূলত মেরু অঞ্চলে বরফের দশায়। ফলে সেখান থেকে মরচে সৃষ্টি সম্ভব নয়। তাছাড়া জল ছাড়াও প্রয়োজন অক্সিজেন। চাঁদে বাতাসই নেই, তায় অক্সিজেন। উপরন্তু সূর্য থেকে ধেয়ে আসা সৌরঝড়ে ক্রমাগত আক্রান্ত হচ্ছে চাঁদ। আর সেই ঝড়ের সঙ্গে এসে পৌঁছচ্ছে হাইড্রোজেন। মৌল হাইড্রোজেন জারণ প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেয়। তাহলে এই মরচের উৎপত্তি কীভাবে? এই প্রশ্নই বিব্রত করছে সমস্ত বিজ্ঞানীদের।
চন্দ্রযান-১-এর দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মরচের উপস্থিতির কথা টের পান হাওয়াই ইউনভার্সিটির গবেষক সুয়াই লি। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ পত্রিকায় এই পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণের কথাও উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে চাঁদের জল বরফ আকারে থাকলেও পৃথিবী থেকে ছুটে যাওয়া ধুলিকণার ধাক্কায় কিছু অণু তরল জলে পরিণত হতে পারে। আর অক্সিজেনের উৎস হিসাবেও তিনি পৃথিবীর কথাই উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে সৌরঝড়ের ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য, পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদের দিকে ধেয়ে যাওয়া সৌরঝড়ের অধিকাংশটাই আটকে দেয় পৃথিবী। চাঁদের চৌম্বক ক্ষেত্র এই ঝড় আটকাতে না পারলেও পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র যে পারে সেটা আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি। আর এই সমস্ত ঘটনার সমাপতনেই চাঁদের গায়ের লোহায় মরচে পড়েছে।
যদিও তাঁর এই সমাপতনের তত্ত্ব অনেকেই মানতে চাননি। তিনটি ঘটনার সম্ভাবনাই অত্যন্ত কম। তার মধ্যে এই তিনটি ঘটনা একসঙ্গে ঘটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী। কারোর কারোর মতে এই রহস্যের অনুসন্ধান করতে হবে চাঁদের জন্ম বৃত্তান্তের মধ্যেই। তবে প্রকৃত উত্তর জানতে যে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রত্যেকেই।
আরও পড়ুন
বয়স প্রায় ৮.৫ কোটি বছর কম, চাঁদের বয়স নিয়ে নয়া তত্ত্ব মহাকাশবিজ্ঞানীদের
Powered by Froala Editor