উচ্চতা ১৩ থেকে ১৫ ফুট। রক্তাভ লাল চুল। দু’হাতে ও পায়ে ৬টি করে আঙুল। সেইসঙ্গে পেশিবহুল চেহারা। এই বর্ণনা শুনে মনের মধ্যে ‘দৈত্য’ বা ‘দানব’ শব্দের কথাই ভেসে ওঠা স্বাভাবিক। কী ভাবছেন? কোনো রূপকথা কিংবা পৌরাণিক গল্পের কথা হচ্ছে? না, একেবারেই তেমনটা নয়। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছিল এমনই এক আশ্চর্য দৈত্যাকার মানব (Giant Man)! হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নথি এবং মার্কিন সেনাদের (USA SWAT) বক্তব্য ছিল এমনটাই।
কীভাবে মার্কিন সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াল এই দৈত্য? কীভাবেই বা এই দৈত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন তাঁরা? নিশ্চয়ই এ-সব প্রশ্ন ভিড় করছে মনের মধ্যে? তবে শুরু থেকেই বলা যাক ঘটনাটা। ২০০২ সালের কথা। বছর খানেক আগেই আফগানিস্তানে দীর্ঘ যুদ্ধের পর অবসান হয়েছে তালিবান রাজত্বের। তবে তখনও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে জারি আছে তালিবানের সংঘাত। আফগানিস্তানের পার্বত্য অঞ্চলে লুকিয়ে চোরাগোপ্তা আক্রমণ শানাচ্ছে তারা। ফলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হামেশাই আফগানিস্তানের (Afghanistan) দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে টহল দিতে দেখা যেত মার্কিন বাহিনীকে।
সেটা ছিল জুন মাস। ঠিক এভাবেই একদল মার্কিন সেনা তালিবানের সন্ধানে টহল দিতে গিয়েছিলেন কান্দাহারের (Kandahar) পার্বত্য অঞ্চলে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যান তাঁরা। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রেডিও সিগন্যালও। তালিবান সন্ত্রাসবাদীদের শিকার হয়েছেন তাঁরা, এমনটাই ধারণা হয়েছিল মার্কিন মুলুকের। ফলে, আরও একটি স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের বাহিনীকে ওই একই জায়গায় পাঠানো হয় নিখোঁজ হওয়া দলের অনুসন্ধান করতে।
তিন দিন পর কান্দাহারের পাহাড়ে সন্ধান মেলে একটি গুহার। গুহামুখেই পড়ে ছিল নিখোঁজ হওয়া সেনাদের ব্যবহৃত রেডিও ট্রান্সমিটার যন্ত্র। অবশ্য অক্ষত ছিল না সেটি। পরিস্থিতি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, এই গুহাতেই প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা। আর তালিবানরা? তারা কি আদৌ পালিয়েছে নাকি লুকিয়ে রয়েছে এই গুহার অভ্যন্তরে?
গুহার ভিতরে পা রেখেই বিপদের ইঙ্গিত পেয়েছিলেন স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের কমান্ডোরা। না, তালিবান সন্ত্রাসবাদীদের কোনো চিহ্ন দেখে নয়। বরং, অসংখ্য হাড়ের স্তূপই ভাবিয়ে তুলেছিল তাঁদের। কেননা, বন্য জানোয়ার ছাড়াও সেখানে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিল নরকঙ্কাল। আশ্চর্য এই দৃশ্য দেখে দ্রুত হেলিকপ্টার পাঠানোর জন্য সেনাশিবিরে যোগাযোগ করেন কমান্ডোরা। ঠিক তারপরেই ঘটে যায় এক বিপত্তি। আচমকাই গুহার ভেতর থেকে ভেসে আসা প্রকাণ্ড এক বর্শা গিঁথে যায় এক সেনার বুকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এক মানবরূপী দৈত্য।
হ্যাঁ, তার উচ্চতা প্রায় ১৩-১৫ ফুট। দু’হাত-পায়ে ছটি করে আঙুল। ওজন প্রায় ৫০০ কেজি। গুলির লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে হারানো সম্ভব হলেও আহত হন বেশ কয়েকজন কমান্ডো। প্রাণ হারিয়েছিলেন একজন। অন্যদিকে গুহার ভিতর থেকেই নিখোঁজ হওয়া সেনাদের ক্ষতবিক্ষত এবং আধপচা দেহের সন্ধানও পান তাঁরা। পরবর্তীতে সেনাছাউনিতে নিয়ে এসে যোগ্য সম্মাননা দিয়ে সমাধিস্থ করা হয় তাঁদের। আর সেই দৈত্যটি? কান্দাহারের সেই গুহা থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রথম কাবুলে নিয়ে আসা হয়েছিল এই দৈত্যটিকে। তারপর তা কার্গো বিমানে করে গবেষণার জন্য পাঠানো হয় আমেরিকায়। তবে আজও এই দৈত্যের আসল ছবি কিংবা কোনো তথ্যই প্রকাশ্যে আনেনি মার্কিন প্রশাসন। এমনকি উদ্ধারকার্যে যাওয়া সেনাদেও বিশেষ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছিল মার্কিন সরকার। তবে কীভাবে প্রকাশ্যে এল এই ঘটনা?
২০০২ সালের কথা। জনপ্রিয় আমেরিকান প্যারানরমাল রেডিও স্টেশন ‘কোস্ট টু কোস্ট’-এ এই গল্প শোনান আফগানিস্তানে কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত এক সেনানী স্টিফেন কোয়েল। তারপর একাধিক প্রাক্তন সেনার মুখেই শোনা গিয়েছিল এই গল্প। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে মার্কিন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয় এই ঘটনা।
অবশ্য এই দৈত্যের গল্প আদৌ সত্যি কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে আজও। অনেকেরই বিশ্বাস বড়ো কোনো ঘটনাকে চাপা দিতেই এই দৈত্যের গল্পকথা সাজিয়েছিল মার্কিন সেনারা। তাই একাধিকবার প্রমাণ চাওয়া হলেও, এই দৈত্যের কোনো ছবিই প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি প্রকাশ্যে আনা হয়নি মৃত সেনানীদের নামও। অন্যদিকে কান্দাহারের স্থানীয় লোককথাতে এমনই এক আশ্চর্য দৈত্যের উল্লেখ রয়েছে। আবার সেনাদের বয়ানও তো এককথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সবমিলিয়ে আজও রূপকথার মতোই রহস্যের মেঘে ঢেকে রয়েছে ‘জায়েন্ট অফ কান্দাহার’-এর (Giant Of Kandahar) গল্প…
তথ্যসূত্রঃ
১. The mysterious ‘Giant of Kandahar’ allegedly killed by US special forces in Afghanistan, Seig Lu, Mysteries Unsolved
২. American soldiers 'killed a giant' in Afghanistan then forced to sign NDAs in 'cover up', Bernadette GiacomazzoJoe Faretra, Daily Star US
৩. The Mythical Kandahar Giant, The Biblical Cryptid Allegedly Killed By U.S. Special Forces In Afghanistan, Bernadette Giacomazzo, allthatsinteresting.com
Powered by Froala Editor