কাট-কপি-পেস্টের জনক তিনি, আবিষ্কার করেছেন কারসারও; চলে গেলেন নীরবেই

‘পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্ট’। হ্যাঁ, আজকের দিনে, এ-পরিচয়ে ডাকা যেতেই পারে কম্পিউটারকে। কম্পিউটার ছাড়া আধুনিক যুগের বহু কাজই অচল। তবে বছর পঞ্চাশ আগেও কম্পিউটারের ব্যবহার এত সহজ ছিল না। রীতিমতো অনুশীলন করে তবে কম্পিউটার চালানো যেত। কম্পিউটারের জগতে এই দ্রুত বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য যেসব বিজ্ঞানী অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন, তাঁদেরই একজন ল্যারি টেসলার। ‘কাট-কপি-পেস্ট’এর জনক।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা গেলেন ল্যারি। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। বিল গেটস, স্টিভ জোবস বা ডেনিস রিচির মতো টেসলার সাধারণ মানুষের কাছে ততটা পরিচিত নাম নন। তবে প্রযুক্তি জগতে তাঁর অবদানের কথা ইতিহাস অস্বীকার করতে পারবে না। 'নো মোড' আন্দোলনের প্রবক্তা তিনি। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন কম্পিউটারের ব্যবহার অতি সহজ করা সম্ভব, যাতে সমস্ত মানুষ এই যান্ত্রিক সাহায্য পায়। এমনই অটল বিশ্বাস থেকেই জিজিটাল দুনিয়ায় যুগপরিবর্তন তাঁর হাত ধরেই।

১৯৪৫ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন টেসলার। কম্পিউটার সায়েন্সে শিক্ষালাভ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেটা ৬০-এর দশক। মানে কম্পিউটারের ইতিহাসের গোড়ার যুগ। একজন প্রোগ্রামার হিসাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলেও অচিরেই হয়ে ওঠেন নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবক। প্রথমে কাজ শুরু করেন জেরক্স কোম্পানিতে। এরপর স্টিভ জোবসের হাত ধরে অ্যাপল কোম্পানিতে প্রবেশ। দুই দশকের উপর কাজ করেছেন অ্যাপল কোম্পানিতে। তারপর কাজ করেছেন ইয়াহু এবং অ্যামাজন কোম্পানিতে। কিশোর কিশোরীদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ ইন্টারফেসযুক্ত স্টেজকাস্ট সফটওয়ার তৈরিও তাঁর হাতেই।

ল্যারি টেসলার বিশেষভাবে পরিচিত তাঁর 'কাট-কপি-পেস্ট' কমান্ডের জন্য। তাঁকে এই প্রযুক্তির জনক বলা হয়। ১৯৭০ সাল নাগাদ জেরক্স কোম্পানির পালো অল্টো রিসার্চ সেন্টার (জেরক্স পার্ক)এ কাজ করার সময় তিনি এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। তবে এই সময়েই তিনি আরো অনেক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। পরবর্তীকালে যেগুলো ইউজার ইন্টারফেসের ভোল বদলে দেবে। এই সময়েই তিনি ইন্টারফেসে ব্যবহার করেন বিট ম্যাপ। ফলে অক্ষর এবং ছবি পাশাপাশি রেখে কাজ করা যায়। এই প্রযুক্তির সাহায্যেই পরে অক্ষর থেকে ছবি, ছবি থেকে অক্ষর বানানো সম্ভব হবে। টাইপিং-এর কাজে কারসরের ব্যবহার করেন তিনিই। আর তাঁর এই কাজ দেখেই তাক লেগে যায় 'অ্যাপল' কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবসের।

জেরক্স পার্কের চাকরি ছেড়ে অ্যাপলে যোগ দেন ১৯৮০ সালে। ততদিনে বাজারে এসে গেছে অ্যাপলের পার্সোনাল কম্পিউটার। এরপর বিভিন্ন বৈপ্লবিক ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনের নেতৃত্ব দিয়েছেন টেসলার। ১৯৮৩ সালে বাজারে আসে লিজা। পরের বছর আসে ম্যাকিন্টস। পার্সোনাল কম্পিউটারে আসে টাস্ক বার, স্ক্রোল বার। আর এসবের পিছনেই ছিল টেসলারের অদ্ভুত উদ্ভাবনী শক্তি এবং অক্লান্ত পরিশ্রম।

একবার ভাবুন তো, হঠাৎ যদি দেখেন আপনার কম্পিউটারে স্ক্রোল বার নেই! কাজ করছে না কারসর। কাট-কপি-পেস্ট করতেও পারছেন না। না, এসব কিছুই হবে না। ল্যারি টেসলারের শরীরটার মৃত্যু হয়েছে শুধু। কিন্তু মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর আবিষ্কার। আর এসবের মধ্যেই তো বেঁচে থাকবেন তিনি।

Latest News See More