‘ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অফ ম্যাগনেটস অ্যান্ড মিরাকলস’— পিঙ্ক ফ্লয়েডের গানের এই বিখ্যাত লাইনটির সঙ্গে কম-বেশি পরিচিত আমরা সকলেই। আমরা চুম্বকের দুনিয়াতেই বাস করছি, তা অস্বীকার করার জায়াগা নেই কোনো। ইয়ারফোন থেকে শুরু করে, কম্পিউটার, এসি, ফ্যান, মোটরগাড়ি, টেলিভিশন— সমস্ত দৈনন্দিন সরঞ্জামের সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে স্থায়ী চুম্বক। তাকে ছাড়া প্রযুক্তির দুনিয়া অচল। কিন্তু আমরা ক’জনই বা জানি চুম্বকের উদ্ভাবকের নাম?
সেই প্রাচীন গ্রিক শেফার্ড ম্যাগনেসের নামই হয়তো বলবেন অনেকে। তবে তিনি যে চুম্বক আবিষ্কার করেছিলেন তা ছিল প্রাকৃতিক চুম্বক। বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে স্থায়ী চুম্বক (Magnet) ব্যবহার করে থাকি, তার মাস্টারমাইন্ড এক জাপানি উদ্ভাবক। মাসাতো সাগাওয়া (Masato Sagawa)। এবার তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কার পেল চূড়ান্ত স্বীকৃতি। সম্প্রতি ক্যুইন এলিজাবেথ (Queen Elizabeth Prize) পুরস্কারে ভূষিত হলেন কিংবদন্তি জাপানি প্রকৌশলী। যা প্রযুক্তির দুনিয়ায় নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য।
সেটা ১৯৮০ সালের কথা। নিওডিমিয়ান, লোহা এবং বোরনের ব্যবহারে এই চুম্বক তৈরি করেছিলেন সাগাওয়া। যা কেবলমাত্র শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষমতার অধিকারীই নয়, একইসঙ্গে তাপ সহনশীলও বটে। ফলে, ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু হয় আশি দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই। বদলে যায় প্রযুক্তির দুনিয়ার ছবি। বর্তমানে এই স্থায়ী চুম্বকের বাজার প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তবে প্রশ্ন থেকে যায় অন্য জায়গায়। ১৯৮০ সালের আগে কি চুম্বক ব্যবহৃত হত না বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে?
হ্যাঁ, অবশ্যই হত। মোটরের আবিষ্কারই যে হয়েছিল আরও এক যুগ আগে। তবে সেইসময় ব্যবহৃত হত সামারিয়াম-কোবাল্টের তৈরি চুম্বক। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যা ছিল তাতে। প্রথমত, কোবাল্ট একটি বিরল ধাতু। ফলে, সেই চুম্বকের দাম হত আকাশছোঁয়া। পাশাপাশি চুম্বকের কুরি পয়েন্টও ছিল অনেক নিচে। কাজেই উল্লেখযোগ্যভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেই চুম্বকত্ব হারাত এই চুম্বক। বিশেষভাবে গাড়ি, ফ্যান এবং বৈদ্যুতিক মোটরের ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন
রিক্সাচালকের জীবন পেরিয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রের উদ্ভাবক; এক রূপকথার জার্নি
এই সমস্যারই স্থায়ী সমাধান এনে দিয়েছিল সাগাওয়ার তৈরি নিওডিমিয়ান ও লোহার চুম্বক। লোহা সহজলভ্য হওয়ায়, সেই চুম্বক যেমন সাশ্রয়ী; তেমনই প্রায় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও অনায়াসেই কাজ করতে পারে এই চুম্বক। এই চুম্বকের আবিষ্কার সার্বিকভাবে বিপ্লব আনে প্রযুক্তির জগতে। অথচ, এমন একটি আবিষ্কারের নেপথ্যে থেকেও সম্পূর্ণ স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছেন উদ্ভাবক ডঃ মাসাতো সাগাওয়া।
আরও পড়ুন
গরম জলে গলে যাবে মুহূর্তেই, অভিনব জৈব প্লাস্টিক তৈরি বাঙালি উদ্ভাবকের
তাঁর এই অনস্বীকার্য কৃতিত্বকে সম্মান জানাতেই, চার দশক পর ক্যুইন এলিজাবেথ পুরস্কার তুলে দেওয়া হল তাঁর হাতে। এর আগে জাপানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘জাপান অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন তিনি। তাছাড়াও পেয়েছিলেন একাধিক সম্মানজনক খেতাব। এবার তাঁর মুকুটে জুড়ল শ্রেষ্ঠত্বের নয়া পালক…
আরও পড়ুন
সিডি, ক্যাসেট, পোর্টেবল রেকর্ডারের উদ্ভাবক তিনি; প্রয়াত ডাচ প্রযুক্তিবিদ লু অটেন্স
Powered by Froala Editor