এই ছবি করার পর 'পার্সেল' এলে ভয়ও পেতে পারি: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

“আচ্ছা, এই ছবিটা করার পর কি বাড়িতে আচমকা পার্সেল এলে ভয় করবে আপনার?” প্রশ্নটা শুনে খানিক চুপ করে থাকলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। বললেন, “হতেই পারে। সিনেমা অনেকসময় দর্শক ও চরিত্রদের প্রভাবিত করে তো। নন্দিনী চরিত্রটা করতে গিয়ে অনেকটাই ডুবে গেছিলাম। এমন একটা প্লট, স্ক্রিপ্ট, এমন চরিত্র... এরপর হুট করে পার্সেল চলে এলে ভয় যে পাব না, সেটা বলতে পারি না।”

আরও পড়ুন
“আমি চাই, আমার সিনেমা দর্শককে বিব্রত করুক, অস্বস্তিতে ফেলুক”— ইন্দ্রাশিস আচার্যর সঙ্গে একটি আড্ডা

কথা হচ্ছিল ঋতুপর্ণার লেক গার্ডেনসের বাড়িতে। আজই মুক্তি পাচ্ছে ইন্দ্রাশিস আচার্যের তৃতীয় ছবি ‘পার্সেল’। সেই ছবি নিয়েই কথা চলছিল। ছিলেন পরিচালক নিজেও। ‘বিলু রাক্ষস’ আর ‘পিউপা’-র পরে ‘পার্সেল’। ইন্দ্রাশিসের ছবিতে বারবার ভিড় করে আসে একটা অসুস্থ সময়, আতঙ্ক, স্মৃতি আর বদলে যাওয়া... ‘পার্সেল’ ছিবিটিকে ঠিক কোন জঁরে ফেলছেন? ঋতুপর্ণা বললেন, এটা শুধু সাইকোলজিকাল থ্রিলার নয়। এটা সম্পর্কেরও ছবি। ছবিতে অসংখ্য স্তর, জাল। থ্রিলার বা হরর ফিল্মের তকমায় ‘পার্সেল’-কে পুরোটা ধরা যাবে না।

আরও পড়ুন
‘রজত কাপুরকে অনেক জ্বালানোর পরেও তাঁর পেশাদারিত্ব মুগ্ধ করেছে’ – ‘শব্দ জব্দ’ টিমের সঙ্গে আড্ডা

‘পার্সেল’-এর ব্রিফ শুনেই নাকি চমকে গেছিলেন ঋতুপর্ণা। তারপর চিত্রনাট্য তৈরি হল। অভিনেত্রী ছাড়াও অন্যতম প্রযোজক হিসেবেও ছবিতে যোগ দিলেন ঋতুপর্ণা। ছবিতে তাঁর নজরকাড়া পারফরমেন্স। ইন্দ্রাশিস জানাচ্ছিলেন, তাঁর মতে গত দশ বছরে এটাই হয়তো ঋতুপর্ণার অন্যতম সেরা কাজ। “সবচেয়ে বড় কথা কী জানেন, একটিবারের জন্যও আমার ওপর অনাস্থা দেখাননি। এত বড়ো অভিনেত্রী, তারকা হওয়া সত্ত্বেও আমার মতো প্রায় নতুন পরিচালকের ছবিতে অভিনয়ের সময় এমন সমর্পণ, অবাক লাগে ভাবতে গিয়ে।” ইন্দ্রাশিস যখন এই কথা বলছেন, পাশে বসে ঋতুপর্ণা হাসছেন। “নন্দিনী চরিত্রটা নিয়ে আমাকে যথেষ্ট ভাবতে হয়েছে, প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। ‘বিলু রাক্ষস’ দেখে আমি কিছুক্ষণ থম মেরে বসেছিলাম। চোখে জলও চলে এসেছিল। ‘পার্সেলে’র গল্প, স্ক্রিপ্ট সবটাই এমন অসাধারণ, পরিচালক ইন্দ্রাশিসও এতটাই প্রস্তুত হয়ে সেটে আসত যে অনাস্থার প্রশ্নই ওঠে না।”

আরও পড়ুন
ঋত্বিকবাবু পরিচালনা করলে ‘অযান্ত্রিক’-এ অভিনয় করতে চাই

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কৃত হয়েছে ‘পার্সেল’। ছবিটি যেদিন দেখানো হয়েছিল, সেদিন উপচে পড়েছিল ভিড়। অনেকে ফিরে গেছিলেন জায়গা না পেয়ে। অন্যান্য দেশ থেকেও প্রশংসা কুড়িয়েছে এই ছবি। থ্রিলার হলেও ‘পার্সেলে’ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের জগঝম্প নেই। কাকতালীয় ঘটনা নেই, সিনেমা জুড়ে আন্ডারটোন... বাংলার দর্শক কি আদৌ অভ্যস্ত এমন সিনেমা দেখার জন্য? ইন্দ্রাশিস শুনে হাসছিলেন। বলছিলেন, “এত প্রচার আমার কোনো সিনেমা নিয়ে আগে হয়নি। প্রশংসা পেয়েছি আগে। এবারে দর্শকরা এলে ভালো লাগবে।” আর ঋতুপর্ণা বলছিলেন, “বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটা নতুন অধ্যায়ের শুরু বলা চলে ‘পার্সেল’-কে। ‘বিলু রাক্ষস’ থেকেই একটা নতুন বদল শুরু হয়েছিল। ‘পার্সেল’ থেকে বদলটা স্পষ্ট। দর্শকরা এমন ছবির পাশে থাকলে ভালো লাগবে।”

আরও পড়ুন
‘মনে কষ্ট নিয়ে সিনেমা বানিয়ে লাভ নেই’

কথা এগোচ্ছিল নানা খাতে। সিনেমার ভিতরের গল্প, বাইরের ভাবনা। কথায় কথায় উঠে আসছিল এই সময়ের অসুখ, আমাদের অন্তর্লীন ভয়ের শিকড়। ‘পার্সেল’ কি আসলে আমাদের সেই আতঙ্কিত মনটাই? সেই কথোপকথনের পুরোটা শুনতে গেলে অবশ্য চোখ রাখতে হবে সঙ্গের ভিডিওতে।