অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তরুণ বয়সে সক্রিয় বাম রাজনীতি করেছেন। বিস্মৃতির আড়াল থেকে সোমেন চন্দের সাহিত্যকীর্তিকে সামনে নিয়ে আসার পিছনে ছিল তাঁর নিরলস, ঐকান্তিক পরিশ্রম। এই কাজ করতে গিয়ে পেয়েছিলেন মুজফফর আহমেদের সান্নিধ্য। তিনি দিলীপ মজুমদার। সোমেন চন্দের রচনা সংকলনের প্রথম প্রকাশ তাঁরই সম্পাদনায়, ১৯৭৩ সালে। পরবর্তীকালে তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয়ও ছিল ‘প্রগতি লেখক আন্দোলনের প্রথম পর্যায় ও সোমেন চন্দের সাহিত্যচর্চা’। ২০০৯ সালে অনুরূপ বিষয়ে কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সিনিয়র ফেলোশিপ লাভ করেন। সোমেন চন্দের জন্মশতবর্ষে প্রহরের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অকপট দিলীপ মজুমদার। শুনলেন সোহম দাস।
সোমেন চন্দকে নিয়ে আপনার দীর্ঘ গবেষণা, পিএইচডি ও তাঁর সাহিত্যচর্চা নিয়ে, এমনকি তাঁর লেখা সংগ্রহ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরানোর পিছনেও আপনার নিরলস পরিশ্রম ছিল। তাই আপনার কাছে প্রথমেই জানতে চাইব, সোমেন চন্দের মতো বিস্মৃতপ্রায় লেখককে নিয়ে আপনি উৎসাহিত হয়ে উঠলেন কীভাবে?
আসলে গোটা ব্যাপারটা খুব অ্যাক্সিডেন্টাল। আমি নিজেও সোমেন চন্দকে চিনতাম না, জানতাম না, কারোর মুখে শুনিওনি। আমি তখন কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ সিপিআই-এম করি, তাদের নেতাদের মুখেও শুনিনি। এম. এ. পড়াকালীন আমি ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গিয়ে পুরনো পত্রপত্রিকা পড়তাম, সেগুলোর পাতা ওল্টাতাম। এটা আমার একটা নেশা ছিল। ’৭১ সালের শেষদিকে ওইরকম পুরনো একটা পত্রিকা ‘অরণি’-র পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে সোমেন চন্দের একটা লেখা আমার চোখে পড়ে। একটা ছোটগল্প, নাম ‘মুহূর্ত’। সেখানে ছোট একটা ফুটনোটের মতো লেখা ছিল যে, এনাকে একুশ-বাইশ বছর বয়সে মেরে ফেলা হয়। তখন আমার খুব উৎসাহ হল মূলত দুটো কারণে। মাত্র সতেরো-আঠেরো বছর বয়সে ‘মুহূর্ত’-র মতো একটা গল্প লিখেছেন তিনি! পড়ে তো আমি পুরো চমকে গেলাম। প্রশ্ন জাগল, কে ইনি? এটা হল আমার উৎসাহের প্রথম কারণ। তারপরে আমি নানা জনের কাছে খোঁজ করলাম। সিপিএমের যেসব নেতাদের সঙ্গে কথা বললাম কেউই কিছু বলতে পারলেন না। এই প্রসঙ্গে এও বলে রাখি, তখনকার সিপিআই নেতাদের কাছে সোমেন চন্দের খোঁজ করলে হয়তো পেয়ে যেতাম, কিন্তু রাজনৈতিক অন্ধত্বের কারণে এবং সংশোধনবাদিতার প্রশ্নে তাঁদের সঙ্গে আমরা কথা বলতাম না। এরপরে সোমেন চন্দের আরও একটা গল্প, যেটা খুব বিখ্যাত, ‘ইঁদুর’, সেটা পড়ি ‘পরিচয়’ পত্রিকায়। তারপর আমি খুঁজে খুঁজে মুজফফর আহমেদের সঙ্গে দেখা করি। তাঁর কাছ থেকেই একটা ক্লু আমি পাই। ওনার কাছ থেকেই শিশির নাগ, কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, এঁদের যোগাযোগটা আমি পেয়ে গেলাম। তখন আমি আরও যোগাড়যন্তর করলাম, আরও পড়তে লাগলাম, এবং ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘শিশু তপন’ বলে একটা গল্পও পেয়ে গেলাম। এইভাবেই উৎসাহটা ক্রমশ হয়েছিল এবং কাজটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম।
নবজাতক প্রকাশন থেকে সোমেন চন্দের রচনাসংগ্রহের প্রথম খণ্ড যখন ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়, এবং দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৭৭-এ, সেই সময়ে পাঠককুলে সোমেন চন্দকে নিয়ে কতখানি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল?
একেবারেই কোনো উৎসাহ বা আগ্রহ ছিল না। একটা ঘটনা বলি। প্রথম খণ্ডটা যখন বেরোল, তখন কাকাবাবু অর্থাৎ মুজফফর আহমেদ কিম্বার নার্সিং হোমে মৃত্যুশয্যায়। সেই অবস্থাতেই তিনি প্রথম খণ্ডের ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। একদিন আমি আর নবজাতকের কর্ণধার মজহারুল ইসলাম বইটা নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে সন্ধেয় ফিরোজা বেগমের গানের অনুষ্ঠান দেখতে যাব, এই পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎ নবজাতকের একজন কর্মচারী এসে খবর দিল, ‘ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’ এই বইটা রাখতে চাইছে না।ন্যাশনাল বুক এজেন্সি এই ধরনের প্রগতিশীল লেখকদের বই নিত এবং বিক্রি করত, নবজাতকের বইও ওরা আগে নিয়েছে। কিন্তু এই বইটা রাখতে রাজি হল না, কারণ, সোমেন চন্দ এখন কোন রাজনৈতিক দলভুক্ত হবেন, তা না জেনে রাখতে পারছেন না তাঁরা। আমার হাসিও পেল, রাগও হল। সোমেন চন্দ যখন মারা গেছেন, তখন তো কমিউনিস্ট পার্টি ভাগই হয়নি। যাইহোক, আমরা সব কথা কাকাবাবুকে জানালাম। উনি তো খুব ধীর-স্থির মানুষ ছিলেন, উনি বললেন, ঠিক আছে, আপনারা কাল আসুন, আমি দেখছি। পরদিন উনি এনবিএ-র একজন কর্ণধারকে ডেকে খুব বকাবকি করলেন যে, তোমরা ঠিকমতো কিছু জানও না, খবরও রাখ না। সুতরাং, বুঝতেই পারছ, আগ্রহ কোন স্তরে ছিল। আগ্রহ তো দূর, পাঠক সেভাবে তৈরিই ছিল না। আর সাধারণ পাঠকের কথা ছেড়েই দিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-অধ্যাপকরাও জানতেন না। আমার যিনি পিএইচডি গাইড ছিলেন, ডঃ ক্ষেত্র গুপ্ত, তিনি প্রগতিশীল লেখক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কিন্তু তিনিও বলেছিলেন, সোমেন চন্দের নামটা শোনা, কিন্তু বাকি কিছু জানি না। মজহারুল ইসলাম আজ বেঁচে নেই, অকালে চলে গিয়েছেন, তাই বলতে আমার দ্বিধা নেই, উনি যে কী মারাত্মক অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন বইটির জন্যে। সমস্ত অর্থ ব্যয় করেছিলেন প্রচারের কাজে। ছোট পুস্তিকা ছাপিয়ে আমরা বিভিন্ন কলেজ লাইব্রেরি, ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে পাঠিয়েছি, বাণিজ্যিক কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছি, বিভিন্ন ছোট পত্রিকাকে ধরে তাদের দিয়ে দু-চার কথা লিখিয়েছি। ক্রমে আগ্রহটা তৈরি হয়। ’৭৩ সালে বইটা বেরিয়েছিল, ’৭৫ সাল অবধিও তেমন আগ্রহ নেই। আশিক দশকে বলতে গেলে, সোমেন চন্দ নামে যে একজন প্রগতিশীল লেখক ছিলেন, এই ধারণাটা বাজারে মোটামুটি প্রতিষ্ঠা পায়। তাছাড়া, ’৭২ সাল থেকে কংগ্রেসের একটা হট্টগোল বাঁধানোর ব্যাপারও ছিল। নবজাতকে একদিন আমি বসে আছি, ফাটাকেষ্ট ও তাঁর দলবল এসে হম্বিতম্বি করেন যে, স্ট্যালিন সিপিএমের লোক, এসব ছাপা চলবে না। আমি মিঃ ফাটাকে বলি, দাদা, সিপিএম হয়েছে ’৬৪ সালে, কাজেই স্ট্যালিনের তখন পাত্তাও নেই। সোমেন চন্দের লাল মলাটের বইটি দেখে তাঁদের জিজ্ঞাসা ছিল, এটা কে? এ সিপিএমের কোন জেলার লোক? তা এইসব ঘটনা ঘটেছিল। কাজেই, আমাদের অনেক কষ্ট করেই ওই সময়ে সোমেন চন্দকে প্রচারে নিয়ে আসতে হয়েছিল।
সোমেন চন্দ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পূর্ব বাংলায় ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। তাঁর অপমৃত্যুর জন্যেও এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত বা ডঃ শফিউদ্দিন আহমেদের বইয়ের ভূমিকাতে যেকথা আছে অর্থাৎ, সোমেন চন্দ ফ্যাসিবাদী শক্তির হাতে নিহত হয়েছিলেন, সেকথা কতখানি সত্য? কারণ, তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী আরএসপি বা ফরওয়ার্ড ব্লক তো সেই অর্থে ঘোষিত ফ্যাসিবাদী ছিল না।
হ্যাঁ, এটা একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আজ অবধি এই জায়গাটায় কেউ পিনপয়েন্ট করেনি, ফলে আমিও খুব পরিষ্কার উত্তর দিতে পারিনি। তুমি যখন এই সঠিক একটা প্রশ্ন করলে, তখন অবশ্যই আমি আমার মতটা বলব। প্রথমে সুভাষ বোসকে দিয়ে শুরু করি। তুমি জান, তাঁর একটা নীতি ছিল, শত্রুর শত্রু হল বন্ধু। সেজন্যেই তিনি সেই সময়ে জার্মানি, জাপান ইত্যাদি দেশের সাহায্য নিয়েছিলেন। সেসময়ে কমিউনিস্ট পার্টি সুভাষকে ‘তোজোর কুকুর’ এসব তো বলেছিল। দ্যাখো, সত্যি কথা বলতে কী, সেই অর্থে ফ্যাসিবাদী তাণ্ডব তো ভারতবর্ষে তখন অনুভূতই হয়নি। আমাদের এখানকার কিছু ছাত্র ব্রিটেনে পড়তে পড়তে প্রোগ্রেসিভ রাইটার্স মুভমেন্টের সঙ্গে জড়িত হন, এবং এখানে ফিরে আসেন ১৯৩৬ সালে। তারপর এখানে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’ তৈরি হয়। সেখানে এইসব ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতার চর্চা হত। এছাড়া, রোমাঁ রোলাঁ, আঁদ্রে জিদ যখন আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলন করেন, তার প্রভাব এসে পড়েছিল। তবে, এই যে বলে, ফ্যাসিবাদী শক্তির হাতে নিহত হয়েছিলেন, একথাটা একবারেই ঠিক কথা নয়। আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে সিপিআইয়ের একটা রাজনৈতিক সংঘর্ষ ছিলই। আমার মতে, সোমেন চন্দকে মারার পিছনে যত না ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণ, তার চেয়েও অনেক বেশি জোরালো কারণ হল, কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধিতা এবং সোমেন চন্দের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষা। তা না হলে তো অ্যাপার্ট ফ্রম সোমেন, আরও অনেকেই মারা যেতে পারত সেদিন, কিন্তু তা তো হয়নি। আর সোমেন চন্দ ফ্যাসিবাদ-বিরোধী বড়ো মুখ, এটাও আমি জোর দিয়ে বলতে পারি না। তিনি ‘সোভিয়েত সুহৃদ সংঘে’-র হয়ে কাজ করেছিলেন। কিন্তু, আমাদের দেশে সেই অর্থে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী মুখ কোথায়? সেভাবে দেখতে গেলে, মুসোলিনির প্রতি মোহভঙ্গ হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ যেসব কথা লিখেছিলেন, সেসব তো অনেক বড় ফ্যাসি-বিরোধিতা। সেই কারণে, আমি মনে করি, সোমেন চন্দের মৃত্যুটা একটা রাইভ্যালরির পরিণতি। বরং, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হাতে মৃত্যু, একথা বলা যেতেই পারে। আসলে, তখন এমন একটা সময় যে, দিশাটা কারোরই ঠিক ছিল বলে আমার মনে হয় না।
ঠিক এই দিশার অস্বচ্ছতার বিষয়টির সূত্র ধরেই আমি পরের প্রশ্নে আসব। সোমেনের পার্টি সিপিআই তখন নিষিদ্ধ ছিল। জার্মানি রাশিয়াকে আক্রমণ করলে তাঁরা সেসময় ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে গিয়ে সোভিয়েতের পাশে দাঁড়ানোর সঙ্কল্প নিয়েছিলেন, যেখান থেকে তৈরি হল ‘সোভিয়েত সুহৃদ সংঘ’। আবার ব্রিটেনও তখন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। সেখানে কি কোনোভাবে তাঁদের কাছে সেই সময়ে ব্রিটিশের হাত থেকে মুক্তির চেয়ে ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতাটা জরুরি হয়ে গিয়েছিল?
ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, এই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু এটা তো ঘটনাই যে, তখন কমিউনিস্ট পার্টির ব্রিটিশ-বিরোধিতাটা অনেক কম হয়ে গিয়েছিল। তখন তারা এই ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতা নিয়ে বেশিই মেতে উঠেছিল। তা না হলে কোনও দিক বিচার না করে সুভাষ বোসকে ‘তোজোর কুকুর’ বলে দেওয়া, এটা কি ঠিক ছিল? সুভাষ বোস তো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কিছু করেননি, এ তো আজ আমরা সকলেই জানি। অত ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র, সেই তিনি সবকিছু ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে এসে চিত্তরঞ্জন দাশকে চিঠি লিখলেন যে, আমি এবার দেশের কাজে যোগ দেব। এই স্বার্থত্যাগ কজনের আছে, যাঁরা তাঁকে এই সমালোচনা করে! সুভাষ বোসের পদ্ধতিতে ভুল থাকতে পারে, কিন্তু সেই ভুলের সমালোচনা অন্যভাবে হবে, এভাবে তো নয়। গান্ধীজীর ক্ষেত্রেও তাইই করেছিলেন এনারা, তাঁর সমালোচনাও অন্যভাবে হওয়া উচিত। এই অন্ধতাটা মারাত্মক ক্ষতিকর।
এই প্রাধান্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কি সোমেনের মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করা যায়?
আমি যেটা বললাম আগে যে, সোমেন চন্দ তো মোটামুটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন। আমি যতটুকু তাঁর সম্পর্কে পড়েছি বা জেনেছি, তাঁর ওয়ে অফ টকিং, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা, ইত্যাদির ফলে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া, তাঁর যে ত্যাগ, ওই ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিয়ে নানাবিধ কাজে যুক্ত হওয়া, মানে একটা সুখী জীবনের বাইরে চলে আসা, এটা অনেকেরই ঈর্ষার কারণ হয়েছিল। মৃত্যুর কারণ বলতে গেলে এই ব্যক্তিগত ঈর্ষার জায়গাটাই বেশি করে উঠে আসে।
ওই একই সময়ে স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্যাসিবাদী জাতীয়তাবাদীদের হাতে শহীদ হওয়া ফ্রেদরিকো গার্সিয়া লোরকা, র্যালফ ফক্স, জন কর্নফোর্ড বা ক্রিস্টোফার কডওয়েল প্রমুখের প্রত্যক্ষ প্রভাব সোমেনের উপর পড়েছিল, সে প্রমাণ আমরা তাঁর কবিতাতেও পেয়েছি। তাঁদের সঙ্গে সোমেনকে যে একাসনে বসানো হয়, এই বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাইব।
না, না, এঁদের সঙ্গে তুমি সোমেনকে কীভাবে একাসনে বসাবে? এঁরা তো ডাইরেক্ট ফাইটার, এঁরা তো স্পেনের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে লড়াই করেছেন, তাঁদের অনেক কষ্টভোগ করতে হয়েছে। সোমেন চন্দের সেই অভিজ্ঞতা কোথায়? এ অনেকটা ‘গৌরবে বহুবচন’-এর মতো ব্যাপার। আমি অকপটেই বলি, আমাদের দেশে যেসব প্রগতিশীল লেখকেরা সাহিত্যের সমালোচনা করেন, তাঁদের বেশিরভাগই সাহিত্যটা সেভাবে বোঝেনই না। তাঁরা সাহিত্য সমালোচনা করতে গিয়ে কে কতখানি প্রগতিশীল কথা বলে গেছেন, সেদিকেই শুধু জোর দেন। সোমেন চন্দের ইন্টিগ্রিটির জায়গা নিয়ে আমার কোনও প্রশ্ন নেই, তাঁর সত্যিই ঐকান্তিকতা ছিল, কিন্তু তাঁকে যাঁরা বিচার করছেন, তাঁরা তাঁর উপর কিছু জিনিস চাপিয়ে দিয়েছেন। একেবারে লোরকার সঙ্গে তুলনাটা সত্যিই বাড়াবাড়ি, তুলনা হয়ই না।
Powered by Froala Editor