২০১৭ সালে মুক্তি পায় বাংলাদেশের বিশিষ্ট পরিচালক মোস্তাফা সরওয়ার ফারুকীর ছবি ‘ডুব’। সেই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান। আর ইরফানের মেয়ের ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। শুটিং চলাকালীন ইরফানকে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সহ-অভিনেতার পাশাপাশি মানুষ ইরফানই বা কেমন? প্রহরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে স্মৃতি উজাড় করলেন তিশা।
প্রহর- ইরফানের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতি কেমন?
তিশা - ইরফান খান যখন ঢাকায় এলেন তখনই তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা। তার আগে ভিডিও কলে যখন সরওয়ার ('ডুব'-এর পরিচালক ) ইরফান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলত, তখন প্রথম ওঁর সঙ্গে আলাপ হয়। ওঁর স্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ তখনই। যেদিন উনি প্রথম শুটিংয়ে এলেন, সেদিন সামনাসামনি আলাপ। স্ক্রিপ্ট সেশন, মহরৎ-এর পর সেদিন খানিকটা সময় একসঙ্গে কাটিয়েছিলাম।
ইরফান খানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বলতে কিছু অসাধারণ মুহূর্ত। গল্পের ছলে, মজা করতে করতেই আসলে কখন কাজটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। উনি একজন বিখ্যাত আন্তর্জাতিক অভিনেতা। এত বড়ো মাপের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সেটে এক মুহূর্তের জন্য তা বুঝতে দেননি। সবসময় যেন এটাই মনে হয়েছে, পাশের বাসার একটা মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। যেন ওঁর সঙ্গে আমার বহু বছরের পরিচয়, বহু দিন পাশে থাকার মধ্যে যে স্বস্তি, সেটাই পেয়েছি যেন বারবার। সিনেমাটা ভালো ভাবে শেষ হওয়ার পিছনে এইসবই থাকে। পাশাপাশি দু'জন অভিনেতার পারস্পরিক সহযোগিতা না থাকলে অভিনয় খুব কঠিন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে উনি আমায় ভীষণ সহযোগিতা করেছেন, আমিও চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো ওঁকে সহযোগিতা করতে।
প্রহর- সহ-অভিনেতা হিসেবে শুধু নয়, আপনি তো মানুষ ইরফানকেও কাছ থেকে দেখেছেন। মানুষ ইরফানের কোন জিনিসটা সবচাইতে আকর্ষণ করত?
তিশা - ইরফান খান কেমন অভিনেতা, তা বলার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞ আমি নই। গোটা পৃথিবীর মানুষ জানে উনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা, কিংবদন্তি। ওই বিষয়ে আলাদা করে আমি কিছু বলব না। কিন্তু মানুষ হিসেবে ওঁর কাছ থেকে একটা জিনিস শিখেছি। এত বড়ো অভিনেতা হয়েও কীভাবে ডাউন টু আর্থ থাকা যায়। আসলে একজন মানুষ যত বড়োই হন না কেন, তাঁকে ততটাই মাটির কাছাকাছি থাকতে হয়, থাকা উচিৎ; ওঁকে দেখে বারবার শিখেছি সেটা।
প্রহর- 'ডুব'-এর অন্যতম প্রযোজকও তো ছিলেন ইরফান। সেই ছবিই যখন বাংলাদেশ থেকে অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিল, তার অভিজ্ঞতাটা ঠিক কেমন ছিল?
তিশা - হ্যাঁ, ডুব বাংলাদেশ থেকে অস্কারে গিয়েছিল। খুবই ভালো লেগেছিল সেই ব্যাপারটায়। আমাদের দেশে সিনেমা বানাতে গেলে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এদেশে সিনেমা তৈরি করা হয়। সেখানে এত সীমাবদ্ধতাকে জয় করে যখন গোটা পৃথিবীর কুর্নিশ পায় কোনো সিনেমা, তখন আসলেই একটা আলাদা অনুভূতি হয়।
প্রহর- ‘ডুব’ মুক্তি পাওয়ার পর, আপনার বা ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে কি ইরফানের যোগাযোগ ছিল আর?
তিশা – হ্যাঁ, ওঁর সঙ্গে আমাদের ছবি রিলিজের পরেও যোগাযোগ ছিল। ইনফ্যাক্ট সাত-আট মাস আগেই লন্ডনে দেখা হয়েছে ওঁর সঙ্গে। লন্ডনে ওঁর ট্রিটমেন্ট চলছিল তখন। ওঁকে দেখতে গিয়েছিলাম, একসাথে ডিনারও করেছিলাম। কিন্তু এটা কখনোই মনে হয়নি কোথাও গিয়ে সবটা থেমে যাবে। বারবার মনে হয়েছে একটা ফাইট ব্যাক করে উনি আবার ফিরে আসবেন। ওঁর মধ্যেও তা নিয়ে জোরালো আশা ছিল। একটা বিশ্বাস দেখেছিলাম ওঁর মধ্যে যে, সুস্থ হয়ে আবার কাজ শুরু করবেন। খুব ভালো লেগেছিল সেটা। কিন্তু তারপর থেকে আর দেখা হয়নি। যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। শেষ দু'মাস সেটা খুবই অনিয়মিত হয়ে যায়, কারণ উনি অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন আরো। চিকিৎসা চলছিল। ফোনও ধরতে পারছিলেন না কারো। কোনভাবেই শেষের সময়টা যোগাযোগ করে ওঠা হয়নি।