অলিম্পিয়ান ফুটবলার থেকে আন্তর্জাতিক রেফারি, বৈচিত্র্যময় জীবনের ইতি

জীবনে একবারই অলিম্পিকের মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অথচ ভারতীয় ফুটবল দলের প্রথম একাদশে নয়। তাঁকে খেলতে হত কোনো খেলোয়াড় চোট পেলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লেই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই আক্ষেপ থেকে গিয়েছিল সৈয়দ শহিদ হাকিমের। অবশ্য পরবর্তীকালে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন বারবার। খেলোয়াড় হিসাবে তো বটেই, সংগঠক হিসাবেও তিনি ভারতীয় ফুটবলের একজন পথিকৃৎ। পাশাপাশি কোচ এবং রেফারির ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। ভারতের হাতে গোনা কয়েকজন আন্তর্জাতিক স্তরের রেফারির মধ্যে একজন শহিদ হাকিম। রবিবার দুপুরে ৮২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন শহিদ।

১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিক, ভারতীয় খেলোয়াড়দের কাছে তখন এক সুবর্ণ অধ্যায়। ব্রিটিশ আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে ইতিমধ্যেই অলিম্পিকে স্বতন্ত্র দেশ হিসাবে স্বীকৃত ভারত। আর আগের অলিম্পিকগুলোতে একটু একটু করে নিজের জায়গাও তৈরি হচ্ছিল। এই সময়েই অলিম্পিকে ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেলেন হায়দ্রাবাদের শহিদ। তবে খবরটা প্রথম শুনে যতটা খুশি হয়েছিলেন, সেই খুশি বেশিক্ষণ থাকল না। কারণ তিনি জানতে পারলেন, প্রথম একাদশে রাখা হবে না তাঁকে। তবু প্রথমবারের জন্য অলিম্পিকের মাঠে পা রাখার একটা সুযোগ তো হবে। কিন্তু কে জানত, সেটাই শেষবার হয়ে থেকে যাবে! অলিম্পিকে সে-বছর এমনিই আশানুরূপ ফল করতে পারেনি ভারতের ফুটবল দল। ফ্রান্সের সঙ্গে ড্র করলেও গ্রুপ লিগের বাকি দুটি ম্যাচে পরাজিত হয়ে ফিরে আসতে হয় তাঁদের। এরপর থেকে ক্লাব ফুটবলের দিকেই সবচেয়ে বেশি মন দিতে শুরু করেন শহিদ। তৈরি করেছিলেন নিজস্ব একটি ঘরানাও।

১৯৬০ সালের সন্তোষকাপজয়ী সার্ভিসেস দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়েই খেলেছেন পরবর্তী ৬ বছর। ক্লাব ফুটবল থেকেও অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন নিজেকে। তার বদলে কোচিং-এর দিকে নজর দিতে থাকেন। পিকে ব্যানার্জির সহকারী কোচ হিসাবে জাতীয় দলে থেকেছেন ১৯৮২ সালে। এই বছরই এশিয়ান কাপ জয় করে ভারতীয় দল। এরপর প্রধান কোচ হিসাবে মেডেরকা টুর্নামেন্টে ভারতকে পদক উপহার দেন শহিদ। তবে ১৯৮৮ সালের ডুরান্ড কাপজয়ী মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা দলের কোচ হিসাবেই সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। এছাড়া সারা জীবনে ৩৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে রেফারির ভূমিকায় থেকেছেন তিনি। সামলেছেন স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার প্রশাসকের দায়িত্বও। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ফিফার নানা প্রকল্পের হয়ে কাজ করে গিয়েছেন শহিদ।

শুধুই পরিশ্রম নয়, তার মূল্য দিতেও কসুর করেনি ভারত। দ্রোণাচার্য পুরস্কার, ধ্যানচাঁদ পুরস্কারের মতো ক্রীড়াজগতের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন শহিদ। গতবছর তাঁর কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন দেশের প্রায় সমস্ত প্রাক্তন ও বর্তমান ফুটবলার। সেই আনন্দ মুছে গিয়ে এবার নেমে এল এক বিষাদময় পরিবেশ। শহিদ হাকিমের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারতের ফুটবল সমাজ।

আরও পড়ুন
স্থূলতার জন্য ব্যঙ্গের শিকার, ফুটবলের মাঠেই জবাব দিয়েছিলেন মুলার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আরবি ইতিহাসের ছোঁয়ায় সেজে উঠছে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চ

Latest News See More