২৯ নয়, পৃথিবীর দুটি দেশে ফেব্রুয়ারির হিসেব হয়েছিল ৩০ দিনেই

ফেব্রুয়ারি বছরের কনিষ্ঠ সন্তান। আর বাড়ির ছোট ছেলের প্রতি সবারই একটু বিশেষ নজর থাকে। কিন্তু তার আয়ু বাড়ে না। শুধু চার বছর অন্তর একটি করে দিন যোগ হয় খাতায়। ২৯ ফেব্রুয়ারি। তবে নিয়মেরও তো বেনিয়ম থাকে! দুটি দেশের সৌজন্যে পৃথিবী সাক্ষী থেকেছিল ফেব্রুয়ারির ৩০তম দিনের। গল্প মনে হলেও, এই কাহিনি একেবারে সত্যি!

১৭০০ সালে সুইডেনের তৎকালীন প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। তার পরিবর্তে চালু হবে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। কিন্তু জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তো ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ লিপ-ইয়ার হওয়ার কথা। না, সেই বছর আর তা পালন করা হয়নি সুইডেনে। কিন্তু ১৭০৪ এবং ১৭০৮ সালে ভুলক্রমে লিপ ইয়ার পালিত হয়। এর ফলে গোলমাল হয়ে যায় মাসের হিসেবে। শেষে ঠিক হয়, আবার জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেই ফিরে জয়া হবে। সেই সূত্রেই ১৭১২ সালে সুইডেনে যোগ করা হয়েছিল দুটি লিপ-ডে। ফলে সে বছর ফেব্রুয়ারি মাস ৩০ দিনে পালন করা হয়। কিন্তু ১৭৫৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাদ পড়ে যায় ১১টি দিন। কারণ, আবার ক্যালেন্ডার বদলানো। ১৭ই ফেব্রুয়ারির পরবর্তী দিন হিসেবে ঘোষিত হয় পয়লা মার্চ। যদিও এহেন সিদ্ধান্ত অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। জীবনের এগারোটা দিন হারানো তাদের কাছে যে খুবই কষ্টের!

আরও পড়ুন
১১ মিনিটের ‘সমস্যা’য় জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারির, মেয়েরা ছেলেদের প্রেমপ্রস্তাব দিতেন এই দিনে

সপ্তাহে মোট সাতটি দিন, এটাই জেনে এসেছি আমরা। কিন্তু একটা সময় সেই প্রচলিত ধারণা থেকেই বেরিয়ে এসেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ, কাজেই সাতদিন রাখার কোনো দরকার নেই। যদি অতিরিক্ত দিন থাকে, তবে সেটা ছুটির দিন বলে ধরা হবে। এই অদ্ভুত হিসেব থেকে ১৯৩০ এবং ১৯৩১ সালে সাত দিনের সপ্তাহকে পাঁচদিন করার জন্য ৩০ ফেব্রুয়ারি চালু করে। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নে সারা বছরে প্রতিটি মাসই ত্রিশ দিনে শেষ হতো। যদিও এই পাঁচদিনের ধারণা ভবিষ্যতে বাতিল হয় এবং সাতদিনে সপ্তাহের আইন ফের চালু হয়। ১৯৪০ সাল থেকে তাই সাতদিনে এক সপ্তাহ পালন করেছিলো রাশিয়া।

তেরোশো শতাব্দীর বুদ্ধিজীবী জোহান দে সাক্রোবসকো বলেন যে খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫ বছর থেকে থেকে আট বছর পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি তিরিশ দিনেই পালন করা হত। কিন্তু আগস্ট আর জুলাইকে সম দৈর্ঘ্যে করার জন্য ফেব্রুয়ারিকে পরবর্তীকালে ছোটো করা হয়। তবে সাক্রোবসকোর এই মতামতের সমালোচনা করেছেন অনেক ঐতিহাসিক। ফেব্রুয়ারি ৩০ নাকি ২৯, এই নিয়ে চলেছে বহু গবেষণা।

আরও পড়ুন
২৯ ফেব্রুয়ারি জন্ম, মৃত্যুও একই তারিখে – ‘১৭ বছর বয়সি’ এক বৃদ্ধ সাহেবের গল্প

বিশেষ এই দিনটি চার বছর পর পর আসায় একরকম উচ্ছ্বাস দেখা যায় মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে এই দিনটিতে যারা জন্মেছেন। চার বছর অন্তর একবার করে বয়স বাড়ছে তাঁদের, ব্যাপারটা সবার কাছেই বেশ মজাদার। তবে সত্যিই কি অধিবর্ষে ফেব্রুয়ারি ২৯ দিনের, নাকি মাস গণনার ক্ষেত্রে আগে আরও একটি দিন যোগ করা হত, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি অনেকেই।

Powered by Froala Editor