শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, স্বৈরাচারের প্রত্যক্ষ উদাহরণ মায়ানমারে

সমাজে পক্ষে সবথেকে ক্ষতিকর তাঁরা। কারণ তাঁরাই জনসাধারণকে উত্তেজিত করে যাচ্ছেন ক্রমাগত। প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবাদের। হ্যাঁ, বুদ্ধিজীবী ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্বদের কথাই হচ্ছে। মায়ানমারে জুন্টার ‘হিট লিস্ট’-এ এবার উঠে এল তাঁদেরই নাম। অভিনেতা থেকে সঙ্গীতজ্ঞ, অধ্যাপক থেকে কবি— মায়ানমারের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নাম, ছবি, ঠিকানা-সহ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকা প্রকাশ করল মায়ানমারের সামরিক শক্তি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম। অভ্যুত্থান-বিরোধী প্রতিবাদ সমর্থন করার জন্য এবার তাঁদের বিরুদ্ধে জারি করা হল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে মায়ানমার সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আন সু কি। আর তারপর থেকেই চলছে লাগাতার গণ-আন্দোলন। গ্রেপ্তার, লাঠি, টিয়ার গ্যাস, জল কামান থেকে শুরু করে লাইভ রাউন্ড— বাদ নেই কিছুই। কিন্তু এসবের পরেও ঠেকানো যাচ্ছে না প্রতিবাদ-আন্দোলন। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ৪৩ শিশু-সহ ৫৭০ জন মানুষের। 

এই গোটা আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে বুদ্ধিজীবী সমাজ। সাধারণ মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই রাস্তায় নামছেন তাঁরা। অংশ নিচ্ছেন প্রতিবাদে। প্রশ্ন তুলে ধরছেন জুন্টার এই নৃশংসতা এবং অরাজকতার বিরুদ্ধে। বৃহত্তর অর্থে এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত হলেও, তাঁরা যেন পরোক্ষভাবে এই প্রতিবাদের চালিকাশক্তি। আর সেই কারণেই স্বৈরাচারী শাসকের লক্ষ্য এখন তাঁরা। দেহ থেকে মস্তিষ্ক ছিন্ন করে আন্দোলন দমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জুন্টা।

গত রবিবার মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা ‘গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মায়ানমার’ জানায়, এবার কঠোরভাবে আরোপিত হতে চলেছে দণ্ডবিধির ৫০৫ নম্বর ধারা। ‘মিথ্যে সংবাদ’ বা অযথা ‘আতঙ্ক সৃষ্টি’-র মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করলে গ্রেপ্তার করা হবে অভিযুক্তদের। শাস্তি তিন বছরের কারাবাস। ঠিক তার পরের দিনই, প্রকাশ করা হয় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের তালিকা। সেখানে রয়েছেন প্রায় ৬০ জন বিভিন্ন মাধ্যমের কলাকুশলী ও বুদ্ধিজীবী। সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন
১ বছরের শিশুকন্যার চোখে গেঁথে বুলেট, এশিয়ায় স্বৈরতন্ত্রের ‘প্রতীক’ এই দৃশ্যই?

মায়ানমারের অভিনেত্রী মায়াট নাও আয়ে জানিয়েছেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করাই ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য। তবে এই প্রতিবাদের জন্য যদি হাজতবাস করতে হয়, তবে তার থেকে গর্বের আর কিছুই হবে না তাঁর কাছে। তবে তিনি আশাবাদী, বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার করা হলেও দমিয়ে রাখা যাবে না গণতন্ত্রকে। আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়ে ছিনিয়ে নেবে ন্যায়বিচার।

আরও পড়ুন
গুলিতে নিহত শতাধিক, পার্টিতে মত্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রনেতা!

তবে মায়ানমারের গণ-আন্দোলন এখন বেছে নিয়েছে অসহযোগিতার পথ। দেশের বিপুল সংখ্যক সরকারি ও বেসরকারি কর্মী অস্বীকার করছেন কাজ করতে। বিগত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরেই অচলাবস্থায় রয়েছে সে দেশের ব্যাঙ্ক, শুল্ক বিভাগ, পরিবহন মাধ্যম। এই আন্দোলন সত্যিই কি অবশ করে দিতে পারবে দেশের স্বৈরাচারী শাসককে? এখন সেটাই দেখার…

আরও পড়ুন
বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, বিচ্ছিন্ন মায়ানমারের আন্দোলনকারীরা

Powered by Froala Editor