বিদেশে গবেষণার চাকরি ছেড়ে জৈব খামারের উদ্ভাবক, শিকড়ের টানে ডা. হরি নাথ

ছিলেন ভারতের সামরিক গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও'র গবেষক। হলেন দক্ষিণ ভারতের একটি জৈব খামারের স্থপতি। মাটির সঙ্গে যে তাঁর নাড়ির যোগ। শুধু তাঁর নয়, তিনি মনে করেন প্রতিটা মানুষের নাড়ির যোগ মাটির সঙ্গে। জোর গলায় বলেন, মাটি সুস্থ থাকলে ফসল সুস্থ হবে। আর ফসল সুস্থ হলে আমাদের শরীরও সুস্থ থাকবে। ডা. হরি নাথ, গবেষণাপত্র আর পেটেন্টের জগৎ ছেড়ে চলে এসেছেন মাটির কাছাকাছি। এখন তিনি জৈব সার প্রস্তুত করেন। মাটিতে সার মেশান। বীজ বোনেন। আর এইসব কাজের ভিতর দিয়ে আমাদের হারিয়ে যাওয়া খাদ্য-সংস্কৃতিকেই ফিরিয়ে আনতে চাইছেন তিনি। আর মানুষের মধ্যে এই নিয়ে সচেতনতাও গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন
আমেরিকার চাকরি ছেড়ে, ভারতে পরিবেশ রক্ষার ‘অন্যরকম’ লড়াই তরুণীর

ডা. হরি নাথের এই কাজের অনুপ্রেরণা হয়ে আছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। তখন ২০০৫ সাল। আবদুল কালাম এদেশের রাষ্ট্রপতি তথা প্রতিরক্ষা দপ্তরের সর্বোচ্চ পদাধিকারী। ডা. হরি নাথ তখন ডিআরডিও'র গবেষক। পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য ডাক এলো ক্যালিফোর্নিয়া মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে। কিন্তু সেখানে যেতে গেলে ভারত সরকারের অনুমতি দরকার। অনুমতি দিলেন রাষ্ট্রপতি। সেইসঙ্গে বললেন আবার দেশে ফিরে আসতে। বিদেশে পৌঁছে সেকথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। মনে পড়লো একটি ঘটনার অভিঘাতে। দেশে তখন তাঁর বৃদ্ধা মা থাকেন। বয়সের ভারে নানান রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে স্পন্ডালাইটিস এবং আর্থ্রাইটিসে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তাররা কিছু পেইন কিলার ছাড়া বিশেষ কোনো চিকিৎসাই করতে পারছিলেন না। ডা. হরি নাথ তখন একটি জাপানি গবেষণাপত্র থেকে জানতে পারেন সজনে শাক এইধরনের ব্যথায় বিশেষ উপকারী। বিদেশে বসেই মাকে সেকথা বললেন। এবং তাঁর এই প্রাকৃতিক চিকিৎসায় সুস্থও হয়ে উঠলেন তাঁর মা। আর এই ঘটনাই তাঁর শিকড়ের টান উস্কে দিয়ে যায়। দেশে ফিরে আসেন ডা. হরি নাথ। তবে আর গবেষণার জগৎ নয়। হাতে মাটি লাগিয়ে নেমে পড়েন চাষের ক্ষেতে।

আরও পড়ুন
গোটা সাইকেলটাই পাটের তৈরি, চমক বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারের

পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার বেশ সুন্দর বন্দোবস্ত আছে আমাদের শরীরে। তবে গত কয়েক দশকে আমদের খাদ্যাভ্যাস যতটা বদলেছে, শরীর ততটা বদলায়নি। আর এই বদলে যাওয়া খাদ্যাভ্যাসের চাপেই আমাদের ঘিরে ধরছে নানা রোগ। চাষের কাজে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের উপস্থিতি তো চিন্তার বিষয় বটেই। তার সঙ্গে কমছে শরীরে ভিটামিনের পরিমাণ। আর এর ফলে আমাদের অন্ত্রে বাস করা উপকারী ব্যাক্টেরিয়ারাও মারা যাচ্ছে। সময় বদলাচ্ছে, গতি বাড়ছে মানুষের জীবনে। কিন্তু তারপরেও মানুষকে নানারকম রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র চিরাচরিত খাদ্যাভ্যাস। মানুষের মধ্যে এই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান ডা. হরি নাথ। তিনি তো চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে আমাদেরও।

Latest News See More