এখানে জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। তারই মধ্যে বাসিন্দারা বেঁচে উঠছেন জীবনের আনন্দে। ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূলের মতো ছড়িয়ে আছেন সবাই। এমনই ভয়ংকর সুন্দর আমাদের সুন্দরবন। সুপার সাইক্লোন আমফানের আবহে এখানকার মানুষরা আবার অনিশ্চয়তার মুখে। আয়লার ক্ষত এখনও তাজা; মাঝখানে আরও কত ঝড় এসে গেছে। সেইসবের থেকেও বড়ো এই আমফান। কাল রাত থেকেই সুন্দরবনে একটু একটু করে নেমে আসছে অন্ধকার। নদী, সাগর সব ফুঁসছে। কাল রাত থেকেই অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। লোকজনদের সরিয়ে নিয়ে গেলেও, তাঁদের মাঠ-ঘাট-জমির কী হবে, কেউ জানেন না। আর এইসব মানুষদের জন্যই রাত জাগছেন ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’ প্রণবেশ মাইতি।
সাগরদ্বীপের এক ছোট্ট কৃষক পরিবারের ছেলে প্রণবেশ। নিজের চোখে দেখেছেন আয়লা। দেখেছেন তাঁর চারপাশের মানুষগুলো কীভাবে খেই হারিয়ে ফেলছে, ভেসে গেছে তাঁদের সর্বস্ব। শুধু মানুষ তো নয়, সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রও জোর ধাক্কা খেয়েছিল। মাটিতে নোনা জল ঢুকে গিয়ে স্বাভাবিক চরিত্রই নষ্ট করে দিচ্ছিল। তার ওপর ম্যানগ্রোভ গাছগুলি সমুদ্রেই বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। এখানেই হাল ধরেন প্রণবেশ মাইতি। যে করেই হোক, এই গাছগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। এই ম্যানগ্রোভ না থাকলে, এখানকার মাটি আরও তলিয়ে যাবে জলে। এই চিন্তা থেকেই সমস্ত জায়গায় ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন তিনি। তৈরি করেন সুন্দরবন গ্রিন এনভায়রনমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। তখন থেকেই তিনি ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’।
আমফানের পরিস্থিতিতেও থেমে নেই প্রণবেশ। করোনার মধ্যেই এমন সাইক্লোন হয়ত আরও তছনছ করে দেবে। ইতিমধ্যেই মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্তত প্রাণটুকু যাতে বাঁচে, সেইজন্যই চেষ্টা করছেন প্রণবেশরা। স্কুল, সাইক্লোন সেন্টার-সহ নানা জায়গায় মানুষদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবারও মজুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’ ও তাঁর টিম।
শেষ মুহূর্তের খবর অনুযায়ী, দিঘার অনেকটা কাছে চলে এসেছে শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোন; যা কিনা আয়লার থেকেও ভয়ংকর। বিকেলের দিকে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা। তার আগেই সমুদ্র ফুঁসে উঠেছে রীতিমতো। আশঙ্কা, অনেক দ্বীপ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। সাজানো সৈকতও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সঙ্গে একটানা বৃষ্টি হয়েই চলেছে। প্রশাসনিক মহলে তৎপরতা তুঙ্গে।