রাস্তাঘাটে দিব্যি চলছে গাড়িঘোড়া। অফিসও খুলে গেছে পুরোদমে। মানুষজন বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়; কেউ মাস্ক পরে, কেউ না পরে। লকডাউন আছে বটে, তা কেবল নামেই। বাইরে সেরকম চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। তাহলে বোধহয় করোনা সেরেই গেছে ভারতে। কিন্তু বাস্তব বড়ো নিষ্ঠুর! গতকালও এদেশে একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু আমাদের চারিদিকের ছবিটা কি এমন কিছু দেখাচ্ছে?
খাতায় কলমে গোটা জুন মাস ভারতে লকডাউন জারি আছে। এটা পঞ্চম দফা, বিশেষ নামও আছে এর! কিন্তু থিয়োরি আর প্র্যাকটিকালের ব্যবধান তো অনেক। সেই জুন মাসের শুরু থেকেই রেকর্ডের পর রেকর্ড করছে ভারত। যেন নিজেই খেলায় মেতেছে! আমরাও আনন্দে মেতেছি। যার ‘সুফল’ ভোগ করছে করোনা। তরতরিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। আড়াই লাখ পেরিয়ে গেছে; জগৎসভায় ষষ্ঠ স্থানও পাকা করে ফেলেছি আমরা। কিন্তু টনক নড়ছে না তাও…
শুধু লকডাউনের পঞ্চম দফাকেই দোষ দেওয়া কেন? গোটা লকডাউন মরসুমের দিকে তাকিয়ে দেখলে আরও অদ্ভুত জিনিস দেখা যাবে। বিভিন্ন কোভিড ট্র্যাকার ও সরকারি রিপোর্ট দেখলে নজরে আসবে বেশ কিছু গ্রাফও। জার্মানি, ইতালি, ব্রিটেন, স্পেনের মতো দেশে লকডাউন শুরুর আগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যা ছিল, লকডাউন উঠিয়ে দেওয়ার পর তা কমেছে। গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও পরের দিকে ক্রমশ নিম্নগামী হয়েছে; এখনও হচ্ছে। আর ভারত?
অনেকেই বলবেন, লকডাউন না ওঠালে তো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধসে পড়ছিল। উঠিয়ে ভালোই হয়েছে। ঠিক বলেছেন। অর্থনীতি ধসে পড়ছে। কিন্তু লকডাউন, করোনার আগে কি খুব একটা ভালো জায়গাতেও ছিল এই অর্থনীতি? অবস্থা তো আগে থেকেই খারাপ ছিল। একটা লকডাউন ঘোষণা করার আগে ন্যুনতম কিছু প্রস্তুতি থাকে। সমস্ত শ্রমিক যারা কাজের প্রয়োজনে ভিন রাজ্যে রয়েছেন, তাঁদের ঘরে ফেরার সময়টুকু দিতে হত। বাজারে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য রাখার সময় দিতে হত। সেই সময়টুকু আদৌ পাওয়া গেছে কি? এবারও বিদেশের সঙ্গে একবার তুলনা করে দেখবেন নাকি?
আরও পড়ুন
করোনা সংক্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বিশেষ জিন, অনুমান বিজ্ঞানীদের
নিজেদের দিকেও কি আঙুল তোলা উচিত না? অবশ্য আঙুল তুলেই বা কী হবে! এখনও পর্যন্ত প্যান্ডেমিক ঘোষণা হয়নি দেশে। যে ইতালির অবস্থা দেখে কয়েকদিন আগেও শিউরে উঠেছি, সেই ইতালিকেও ছাপিয়ে গেছে ভারত। লকডাউনের পর ইতালির গ্রাফ কিন্তু নিম্নমুখী। আর আমরা? নতুন নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। রাস্তাঘাট, ধর্মস্থান, হোটেল সব খুলে দেওয়া হয়েছে। জুনের প্রথম থেকেই সংক্রমণের হার বাড়ছিল। চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা বলছেন, অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। একাধিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, আগামি দিনে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াবে ভারত। সংক্রমণ বাড়বে আরও কয়েকগুণ। একমাত্র লকডাউনই পারত এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এরপরও কি ‘সফল’ লকডাউনের উৎসবে মাতব আমরা?
আরও পড়ুন
ভারতে এক দিনে করোনায় আক্রান্ত ১০,০০০-এরও বেশি মানুষ
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন
করোনা-মোকাবিলায় বিশেষ ওষুধ, আগামী সপ্তাহেই প্রয়োগ শুরু করবে রাশিয়া
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রাণ কাড়ল করোনা, চলে গেলেন সুরকার সাজিদ-ওয়াজিদ জুটির ওয়াজিদ খান