লকডাউনে বেরনো আটকাতে পথে নামল ‘ভূত’, ভয়ে গৃহবন্দি ইন্দোনেশিয়ার গ্রামবাসীরা

বাড়ির বাইরে বেরোবে না একদম, রাস্তায় ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোটবেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এমন সব ঘুমিয়ে পড়ার স্মৃতি। সেসব ভূতের কতরকম নাম। কেউ মামদো, কেউ গেছো, কেউ আবার শাঁকচুন্নি। পৃথিবীর সব দেশেই এমন সব ভূতের বাস, ছোটদের ভয় দেখিয়ে যারা ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে। কিন্তু বড়োদেরও কি এভাবে ঘরবন্দি করা যায়? অবশ্য চেষ্টা করে দেখতে আপত্তি কী? লকডাউনের দিনে এমনই অভিনব প্রচেষ্টা দেখা গেল ইন্দোনেশিয়ার একটি গ্রামে। মানুষকে অনেক বুঝিয়েও যখন করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা গেল না, তখন পথে নামল ভূতেরা। ইন্দোনেশিয়ার প্রাচীন এই ভূতের নাম পোকং।

অনেক বয়স্ক মানুষই করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা ঠিকমতো বুঝতে পারছেন না, বা চাইছেন না। লকডাউন যেন তাঁদের কাছে নিছক একটা অপ্রত্যাশিত ছুটি। অতএব সেই আমেজ উপভোগ করতে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। অনেক বুঝিয়েও যখন কিছু হল না, তখন বিকল্প পথ ভাবলেন একদল স্বেচ্ছাসেবী। কথা বললেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও। তারপর রাস্তায় বসল পাহারা। মানুষের নয়, ভূতের পাহারা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সাদা ফিতে দিয়ে মোড়া ইন্দোনেশিয়ার সুপ্রাচীন ভূত পোকং। বিশ্বাস থাকুক বা না থাকুক, অন্ধকারে এমন দৃশ্য দেখলে প্রত্যেকেরই গলা শুকিয়ে যাবে।

এমন অভিনব প্রচেষ্টা পৃথিবীর নানা দেশেই সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রত্যেকেই স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে জানতে চাইছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই অভিজ্ঞতা মোটেও আশানুরূপ নয়। ভূতের ভয়ে মানুষ তো ঘরে বসে থাকলেন না, উপরন্তু ভূত দেখতে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়। দেখতে দেখতে ভিড় জমে উঠল। তাঁদের জারিজুরির কথা তখন প্রত্যেকেই ধরে ফেলেছেন।

তবে সাময়িক ব্যর্থতার দুঃখ কাটিয়ে উঠেই নিজেদের পরিকল্পনা একটু বদলে নিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। রাস্তা থেকে ভূতের স্থায়ী পাহারা উঠে গেল ঠিকই, কিন্তু ভূত একেবারে চলে গেল না। এখনও হঠাৎ হঠাৎ রাস্তায় মানুষ দেখলেই চলে আসেন তাঁরা (পড়ুন তেনারা)। আর এই সাডেন পেট্রোলিংএর ব্যবস্থায় খানিকটা কাজ হয়েছে। রাস্তায় সাজানো ভূত যেমন আছে, তেমনই সত্যিকারের ভূতও নিশ্চই আছে। দৈবাৎ তাঁর খপ্পরে পড়লে তো আর দেখতে হবে না। অতএব ইন্দোনেশিয়ার কেপু গ্রামে এখন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে চলছে লকডাউন। করোনা ভাইরাসের ভয় না থাকলেও, ভূতের ভয় আছে বৈকি!

মানুষের নানা বিষয়ে সচেতনতার অভাব মেটাতে অনেক সময়েই কুসংস্কারকে ব্যবহার করে থাকেন নানা দেশের প্রশাসন। তাই নিয়ে বিতর্কও ওঠে প্রচুর। এভাবে কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত কিনা, সে প্রশ্ন ভিন্ন। তবে এখন ছুটির আমেজ উপভোগের সময় নয় নিশ্চই। ঘরে বন্ধ হয়ে থাকাটা খুবই উচিত। আর সেই কাজে যদি মানুষের চেয়ে ভূতের পারদর্শিতা বেশি হয়, তবে ক্ষতি কী?